চট্টগ্রামের কাঁচা বাজারে স্বস্তির হাওয়া কমছে নিত্যপণ্যের দাম

প্রতিদিনের বাজারে দাম বাড়ার ধাক্কায় যখন সাধারণ মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ, তখন একরাশ স্বস্তি এনে দিল চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে। চলতি সপ্তাহে নগরীর কর্ণেলহাট ও পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে দেখা গেছে। বিশেষ করে সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। তবে গরু ও খাসির মাংসসহ কিছু পণ্য এখনো ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
শনিবার (২৪ মে) চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণেলহাট ও পাহাড়তলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি মৌসুমি সবজি মিলছে উল্লেখযোগ্য কম দামে। বাজারে টমেটো ৩০-৫০, দেশি গাজর ৪০-৬০, লম্বা বেগুন ৬০, সাদা গোল বেগুন ৬০, কালো গোল বেগুন ৭০, শসা ৩০-৫০, উচ্ছে ৬০, করলা ৬০, কাঁকরোল ৪০-৬০, পেঁপে ৮০, মুলা ৬০, ঢেঁড়স ২০-৪০, সজনে ১২০, পটল ৩০-৪০, চিচিঙ্গা ২০-৩০, ধুন্দল ৪০, ঝিঙা ৩০-৪০, বরবটি ৪০-৬০, কচুর লতি ৫০-৭০, মিষ্টি কুমড়া ২৫-৩০, কাঁচা মরিচ ৩০-৫০ এবং ধনেপাতা ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম কমায় বাজার করতে অনেকটাই সুবিধা হচ্ছে বলেন কর্ণেলহাট বাজারের ক্রেতা শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে বেগুন ৬০ টাকায় কিনেছি, আজ সেটা ৫০ টাকায় পাচ্ছি।’
‘টমেটো, গাজর, শসাসহ প্রায় সবকিছুর দামই গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। এতে আমরা সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছি’ বলেন গৃহিনী ফাতেমা বেগম।
সবজির দামের বিষয়ে সবজি বিক্রেতা সিদ্দিক উল্লাহ বলেন, আগের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। যেকোনও কিছুর সরবরাহ বাড়লে দাম অটোমেটিক কমে যায়। কিছু দিন আগেও সবজির দাম যখন বাড়তি ছিল তখন বিক্রিও কম হয়েছিল। এখন দাম কম, ক্রেতাদের চাহিদাও মোটামুটি বেশি।
মাংসের বাজারে ব্রয়লার, কক এবং দেশি মুরগির দামেও স্তিতিশীলতায় স্বস্তি এনেছে ভোক্তাদের মধ্যে। ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকা, কক মুরগি ২৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩শ-৩১০ এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের মধ্যে বর্তমানে প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম ১২৫-১৩০ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কর্ণেলহাটের মাংস বিক্রেতা মো. সেলিম জানান, ক্রেতারা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে মুরগি কিনছেন। কোরবানির আগ পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে সবজির বাজারে স্বস্তি মিললেও গরু ও খাসির মাংসের দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। গরুর মাংস ৮শ এবং খাসির মাংস ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় এখনো বেশি।
পেঁয়াজের দাম মান ও আকারভেদে ৫৫-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রসুনের মধ্যে দেশি রসুন ১২০, চায়না রসুন ১৮০-২শ টাকা আর চায়না আদা ১৮০-২শ এবং ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর ক্ষেত্রে সাদা ও লাল আলু উভয়ই ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে, তবে বগুড়ার আলুর দাম ৩৫ টাকা। মুদি সামগ্রীর মধ্যে ছোট মসুর ডাল ১৩০, মোটা মসুর ১১০, বড় মুগ ১৪শ, ছোট মুগ ১৭০, খেসারি ১শ, বুটের ৬০, মাষকলাই ১৯০, ডাবলি ৬০ ও ছোলা ১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও বাদাম, কিসমিস, মসলা আগের মতই, চাল ১১০-১৫০, চিনি ১১০-১১৫, ময়দা ১৫০, আটা ১১৫, সয়াবিন তেল ১৫৭-১৮৯ এবং সরিষার তেল ১৯০ টাকা প্রতি লিটার দরে পাওয়া যাচ্ছে।
প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০, খোলা ১১০-১৩০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১৫ টাকা, খোলা ১১০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ এবং আটা ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলের মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন ১৮৯ (প্রতি লিটার), খোলা ১৫৭ টাকা এবং খোলা সরিষার তেল ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে ইলিশ ১২শ-৩ হাজার, রুই ৪শ-৬শ, কাতল ৪শ-৫৫০, কালিবাউশ ৪শ-৭শ, চিংড়ি ৯শ-১৭শ, কাঁচকি ৪শ, কৈ ২৫০-৩শ, পাবদা ৪শ-৫শ, শিং ৪শ-৬শ, টেংরা ৭শ-১ হাজার, বোয়াল ৬শ-১২শ, শোল ৭শ-১ হাজার, চিতল ৬শ-১ হাজার এবং রূপচাঁদা ১২শ-১৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম আরও স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ী ইয়াকুব সওদাগর জানান, সরবরাহ ঠিকঠাক থাকলে ভবিষ্যতেও বাজার স্থিতিশীল থাকবে। এতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি আসবে।
এদিকে, আসন্ন কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দাম বেড়েছে লবঙ্গ ও দারুচিনির। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫৫ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৪৪৫ এবং ১০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ ১৩৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজিতে ২শ টাকা দাম কমেছে এলাচের। খাতুনগঞ্জে ৪ হাজার ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এর বাইরে জিরা ৬শ, ধনিয়া ১৫০ এবং গোলমরিচ ১১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারটিতে।
Comments