Image description

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর সদরের মহাসড়ক লাগোয়া বহুল বাণিজ্যিক এলাকা খ্যাত চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্সের ২য় তলায় ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান। দীর্ঘকাল ধরে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষ এই মার্কেটে গিয়ে নিরাপদে ব্যাংক লেনদেন শেষ করেন। তাতে কোন গ্রাহকের অভিযোগ কিংবা আপত্তি ছিলনা। সম্প্রতি সময়ে এই শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন ব্যাংকের ভিপি মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম মনজু। 

একদিকে গত দুই বছরের ব্যবধানে ৪জন শাখা ব্যবস্থাপক পরিবর্তনের কারণে বড় বড় সিসি ঋণ নেয়া প্রশিদ্ধ ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়, অন্যদিকে,সাধারণ গ্রাহকদের সাথে ম্যানেজারের ভাষাগত সমস্যা কারণে গ্রাহকরা ইসলামি ব্যাংক থেকে মুখে ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এরই মাঝে ম্যানেজারের সাথে অদৃশ্য গোপন চুক্তিতে ছিনতাইকারী উপদ্রব এলাকায় পৌর সদরের বাইপাশ সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতার মালিকনাধীন অপরিচিত নতুন মার্কেটে ইসলামী ব্যাংক চকরিয়া শাখা স্থানান্তরের গুঞ্জনে আরো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ গ্রাহকরা। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্সের ২য় তলায় ৬ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনে রয়েছে চকরিয়া ইসলামি ব্যাংক। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে থাকা ইসলামি ব্যাংকের এই শাখায় মার্কেট কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি সনের আগামী নভেম্বর মাসে। ফ্লোর পজিশন ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায স্থানান্তরের জন্য যেতে চাইলে উভয় পক্ষে অন্তত ৩ মাস পূর্বে অবহিত করার নিয়ম রয়েছে। অন্যথায় নতুন ভাড়া দর সাব্যস্থ করে চুক্তি নবায়ন করারও নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চুক্তি নবায়ন না করে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন অপরিচিত ভিন্ন জায়গায় ব্যাংকটি স্থানান্তরিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আরো জানাগেছে, টোকাই, পকেটমার, ছিনতাইকারীদের উপদ্রবখ্যাত এলাকা পৌর সদরের বাইপাশ সড়কে একটি জনবসতি পাড়ার ভেতরে মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিনের মালিকানাধীন নবনির্মিত চকোরী ওশান সিটি নামে অপরিচিত মার্কেটের ২য় তলায় মোটা অংকের গোপন চুক্তিতে মার্কেট চালু করার কৌশল হিসেবে ইসলামি ব্যাংক স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শেষ করতে যাচ্ছেন মর্মে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। চকরিয়ার জনপ্রিয় ও সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রাহকের এই ব্যাংকটি ওই মার্কেটে স্থানান্তরিত হলে ব্যবসায়ীরা টোকাই, পকেটমার, ছিনতাইকারীদের কারণে চরম বেকায়দায় পড়বেন বলে মনে করেন। বড় বড় সিসি ঋণ নেয়া ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে ব্যাংকে যাতায়াতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। কে দেবে ব্যবসায়ীদের টাকার নিরাপত্তা? 

অন্যদিকে সাধারণ গ্রাহকরাও সহজে স্থানান্তরিত ব্যাংকটি খুজে নিতে পারবেন না। নতুন জায়গা পরিচয় করতেও দীর্ঘ সময় চলে যাবে। ফলে ব্যাংকের ব্যবসায় মারাত্মক ধ্বস নামবে বলে মনে করেন সচেতন মহল ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ইসলামি ব্যাংক চকরিয়া শাখায় ঋণসহ লেদদেন চলছে প্রায় ৮ শত কোটি টাকা এবং এই শাখায় গ্রাহক রয়েছেন প্রায় এক লক্ষাধিক। 

ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা জানান, এমনে ব্যংকে অতিরিক্ত গ্রাহকের কারণে ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লেনদেন করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আতংকিত নতুন অন্য মার্কেটে গিয়ে লেনদেন করার কি আছে। প্রয়োজনে একাউন্ট বন্ধ করে দিয়ে অন্য যেকোন ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট খুলে লেনদেন শুরু করবেন।

ব্যাংকের গ্রাহক স্থানীয় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন, মোস্তাক আহমেদ,  মোঃ কচির, শহিদুল ইসলাম,  মহি উদ্দিন, আবদুল মালেক, মোঃ শাখাওয়াত, মোঃ জসিম উদ্দিন,  মোঃ জাফর, ওমর ফারুক, নুরুল ইসলাম জানান,  বর্তমান ম্যানেজার স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়ায় তার ব্যবহারে সন্তুষ্ট না, সেখানে এত রিক্স নিয়ে লেনদেন করার কি আছে। তাই ভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে লেনদেন শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন অনেক গ্রাহক।

চকরিয়া ব্যবসায়ী সমিত রেজাউল হক সওদাগর জানান,  কোন ব্যবসায়ী মুল টাউন থেকে ভেতরে গিয়ে  ব্যাংক লেনদেন করতে যেতে চায়না। এখন ভালো ভালো পরিবেশে মহাসড়ক লাগোয়া অনেক ব্যাংক সৃষ্টি হয়েছে। যাতায়ত পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে ব্যবসায়ীদের টাকার রিক্স কে নেবে।

ব্যাংক স্থানান্তরের গুঞ্জন ওঠা চকোরী ওশান সিটি মার্কেটের মালিক সাহাব উদ্দিন জানান, স্বাভাবিক নিয়মে ইসলাম ব্যাংক স্থানান্তরের জন্য আমার নবনির্মিত মার্কেট চয়েস করেছে।

ইসলামী ব্যাংক চকরিয়া শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম মনজু তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ব্যাংকের বর্তমান পজিশনে একদিকে জায়গা সংকোলন হচ্ছেনা, অন্যদিকে চুক্তি নবায়ন করতে গিয়ে ভাড়ার পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সরে জমিনে তদন্ত করে ব্যাংক স্থানান্তরের প্রতিবেদন জোনাল ও হেড অফিস হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গেছে। স্থানান্তরের ফাইল অনুমোদন হয়ে টেন্ডার আহবানের নির্দেশনা আসবে। এ ক্ষেত্রে তাহার কোন হাত নেই। এরপরও বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের ইখতিয়ার।