Image description

রাসেল মোল্লার মরদেহ আনা হবে এমন খবরে বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। বাবা আজাদ মোল্লার কোলে নিহত রাসেলের ৫ বছরের কন্যাশিশু ইয়াসমিন। ছোট্ট ইয়াসমিন দাদুকে খাটিয়া দেখিয়ে বলে, ‘দাদু, এটা দিয়ে কী করে?’ পাশের একজন জবাব দেন, ‘এখানে তোমার আব্বুকে শোয়ানো হবে।’ ইয়াসমিন তখন দাদুকে বলে, ‘তাহলে ঘর থেকে বালিশ এনে দাও, আব্বু এখানে শুবে।’ 

শনিবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিহত রাসেল মোল্লার বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শুক্রবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি নিহত হন।

রাসেল (২৮) তেনাপচা গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে। তিনি পেশায় গাড়িচালক ছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা রাসেলের স্ত্রী।

আজাদ মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে নুরাল পাগলের ভক্ত ছিল। সে তো কারও ক্ষতি করেনি। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এরপর প্রশাসনের লোকজন গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে আবারও হামলা করে কুপিয়ে হত্যা করে।’

স্থানীয়রা জানান, রাসেল শান্তশিষ্ট স্বভাবের মানুষ ছিলেন। কোনোদিন কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ জড়ায়নি। 

শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুপুর তিনটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় নুরাল পাগলার দরবার হামলা চালায় একদল লোক। এ হামলাকারীরা শরিয়ত পরিপন্থিভাবে দাফনের অভিযোগ তুলে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়। এরপর মৃতদেহের অবশিষ্ট ছাই ও দেহাবশেষ পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। শনিবার গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেলিম মোল্লা এ মামলা করেন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।  শুক্রবার যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তা সত্যি দুঃখজনক।

এদিকে রোববারও নুরাল পাগলার দরবার এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।