Image description

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা সেনা ও আরাকান আর্মির মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশঙ্কায় শত শত রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের লালদিয়া দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ‘নিরাপদ প্রত্যাবাসন’ নিয়ে কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে এই ঘটনা সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে মেরুল্লা এলাকায় জান্তা সরকার নতুন করে সেনা মোতায়েন করেছে। শুক্রবার মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজে প্রায় ৩০০ সেনা এলাকায় পৌঁছায় এবং আরাকান আর্মির ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আরাকান আর্মির সদস্য নিহত হওয়ার খবরে স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ৪০০ থেকে ৭০০ রোহিঙ্গা লালদিয়াতে আশ্রয় নিয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী লালু বলেন, “গত রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে সীমান্তের ওপারে কুমিরখালী, শীলখালী ও সাইডং এলাকা থেকে ব্যাপক গোলাবারুদের শব্দ পাওয়া গেছে। ফলে সীমান্তের কাছাকাছি চিংড়ির প্রজেক্টে থাকা লোকজন ভয়ে পালিয়ে এসেছে। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর ফের গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। ফলে আবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।”

গোলার শব্দ পেয়েছেন একই ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডর মেম্বার হাজি জালাল আহমদ। তিনি বলেন, “আমি অসুস্থ। ভোরে উঠেছিলাম, তখন বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ পেয়েছি।”

হোয়াইক্যংয়ে বেড়িবাঁধের কাছাকাছি চিংড়ি প্রজেক্টে বসবাসকারী আব্দুর রহমান বলেন, “গতকাল রাত থেকে মিয়ানমারের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার ভোরেও সকালে কয়েকবার গোলার বিকট আওয়াজ পেয়ে পার্শ্ববর্তী বাজারের কাছাকাছি দৌড়ে আসি। এই সীমান্তের ওপারে ফের যুদ্ধের মতো গোলার শব্দ ভেসে আসছে।”

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।” শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত মিয়ানমারের কুমিরখালী, শীলখালী ও সাইডং এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে, যা সীমান্তবর্তী হোয়াইক্যং এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, “আগের সংঘর্ষে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইছে।” তিনি আরাকান আর্মির নির্যাতন ও চাঁদাবাজিকেও রোহিঙ্গাদের পলায়নের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

রোববার থেকে কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের সমস্যার কথা শুনবেন। সম্মেলনে যোগ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। রোহিঙ্গা নেতা মৌলভী সৈয়দ উল্লাহ বলেন, “আমরা অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে আরাকানে ফিরতে চাই। বিশ্ব প্রতিনিধিদের কাছে এই আকুতি জানাব।”