Image description

এক সময়ের ইলিশের অফুরন্ত ভাণ্ডার পদ্মানদী এখন ইলিশশূন্য। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরে বসবাসরত হাজার হাজার জেলে এখন হতাশায় দিন পার করছেন। ইলিশের ভরা মৌসুমেও জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত রূপালি ইলিশ। ফলে অনেক জেলে বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য জীবিকায় ঝুঁকছেন। নদী পাড়ের জেলেপল্লীগুলোতে এখন হাহাকার আর হতাশার চিত্র।

স্থানীয় জেলেরা জানান, গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাল ফেলেও তারা প্রায় খালি হাতেই ফিরছেন। জেলে মো. মুকলেছুর রহমান বলেন, "ছয়-সাতজন মিলে সারাদিন যা ইলিশ পাই, তা বিক্রি করে নৌকা বা ট্রলারের তেলের খরচও ওঠে না।" আরেক জেলে আবুল ফরাজি বলেন, "গত এক সপ্তাহ ধরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা নেই। মাঝে মাঝে দু-একটা ছোট ইলিশ পাওয়া যায়, তা দিয়ে সংসার চলে না। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না, আবার ইলিশ না পেলে বাঁচবো কীভাবে?"

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া, ঢেউখালী, আকোটের চর ও চর নাসিরপুর ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার মানুষ ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে প্রায় ৬৫০ জন জেলের কার্ড রয়েছে। নদীতে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় বাজারে দামও আকাশছোঁয়া। পিয়াজখালী বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী মো. জয়নাল মোল্যা বলেন, "আগে ইলিশ বেশি পাওয়া যেত, দাম ছিল কম। এখন ইলিশ কম, তাই দাম অনেক বেশি।" বর্তমানে পদ্মার এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ ৩-৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট ইলিশেরও দাম ১-২ হাজার টাকার নিচে নয়। ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা শহিদুল মুন্সী বলেন, "মেহমান আসছে তাই পদ্মার তাজা ইলিশ কিনতে এসে দেখি দাম অনেক বেশি। ছোট ইলিশই অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে।"

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, পদ্মায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে ইলিশের চলাচল কমেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে পানি কমে গেলে ইলিশের পরিমাণ বাড়বে।

অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, "ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে হবে।" তিনি আরও জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু বিশাল পদ্মা নদীর কারণে পুরোপুরি ইলিশ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, "জেলেরা যদি প্রতি বছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি মেনে চলেন, তাহলে হয়তো ইলিশ সংকট কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব।"