
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত একটি বন্য হাতিকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকসহ বন বিভাগের ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে দুজন চিকিৎসককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিজিবির হেলিকপ্টারে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আহতরা হলেন—কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা আলী নেওয়াজ, ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাদ জুলকারনাইন, এবং গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান। হাতেম সাজ্জাদ জুলকারনাইন ও মোস্তাফিজুর রহমান বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আলী নেওয়াজ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি ১২ জন স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা আলী নেওয়াজ জানান, গত রোববার (১১ আগস্ট) মিয়ানমার সীমান্তের কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরণে হাতিটি গুরুতর আহত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) তিনি চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি দল নিয়ে রামু উপজেলার দারিয়ারদীঘি সংরক্ষিত বনে যান, যেখানে হাতিটি অবস্থান করছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর হাতিটির উপস্থিতি টের পাওয়ার আগেই এটি হঠাৎ আক্রমণ করে। এতে দলের সবাই আহত হন। হাতিটি এমনকি একজনের বন্দুক কেড়ে নিয়ে বনের ভেতর ছুড়ে ফেলে, যা পরে খুঁজে উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে আহত হাতিটি সুচিকিৎসা পায়। বনকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।” তিনি আরও জানান, হাতিটির গতিবিধি এখনও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, স্থলমাইন বিস্ফোরণে হাতিটির সামনের ডান পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে। পায়ের তলা ও নখ উড়ে গেছে, ফলে এটি বাকি তিন পায়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। ক্ষতের যন্ত্রণা ও খাবার সংগ্রহের কষ্টে হাতিটি হাঁপিয়ে উঠছে। চিকিৎসকদের মতে, রক্ত ও পানিশূন্যতার কারণে হাতিটি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন।
নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সরকার জানান, মিয়ানমারের অংশে পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে হাতিটি আহত হয়ে গত রোববার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি ও আশারতলির মাঝামাঝি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
Comments