Image description

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সুস্বাদু কাঞ্চন পেয়ারা সারা দেশে তার গুণগত মান, স্বাদ ও আকারের জন্য বিখ্যাত। এই পেয়ারা এখন দেশজুড়ে একটি বিশেষ কৃষিপণ্য হিসেবে সুপরিচিত। উপজেলার হাসিমপুর, সৈয়দাবাদ ও কাঞ্চননগর এলাকায় এই জাতের পেয়ারার উৎপাদন বেশি হওয়ায় এটি ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এই পেয়ারা পুরোদমে বাজারে এসেছে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে।

চন্দনাইশে কয়েক দশক ধরে প্রায় দুই সহস্রাধিক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ করে আসছেন। এ অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু পেয়ারা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, যার ফলে এখানকার পেয়ারা আকারে বড়, রসালো, সুস্বাদু এবং সহজে নষ্ট হয় না। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই পেয়ারার প্রধান মৌসুম। চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনুপস্থিতির কারণে উৎপাদন ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে, যার মধ্যে ৭৩০ হেক্টরে কাঞ্চন পেয়ারা এবং ২০ হেক্টরে অন্যান্য জাতের পেয়ারা উৎপন্ন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ১৫ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়।

উপজেলার রৌশনহাট, খাঁনহাট, বাগিছাহাট, কাঞ্চননগর বাদামতল, জামিজুরি, হাসিমপুর, দোহাজারীসহ বিভিন্ন হাটে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পেয়ারার কেনাবেচা চলে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কাছাকাছি হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা সহজেই এই পেয়ারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহন করছেন। তবে চাষিরা অভিযোগ করেন, অবকাঠামোগত সমস্যা, হিমাগারের অভাব, ন্যায্য দাম না পাওয়া, বাজার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ঘাটতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

চাষিরা জানান, হিমাগারের অভাবে পেয়ারা বেশি দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে হাসিমপুর ও কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে পেয়ারা বাগানের প্রধান কেন্দ্রে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তারা মনে করেন, সরকারি আধুনিক কৃষি সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া সরাসরি বাজারজাতকরণে সহায়তা পেলে চাষিরা উপকৃত হবেন এবং কাঞ্চন পেয়ারা আন্তর্জাতিক বাজারেও স্থান করে নিতে পারবে।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন বলেন, “চলতি মৌসুমে কাঞ্চন পেয়ারার ফলন ভালো হয়েছে। রোগবালাই দমন ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে চাষিদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। চাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা, উপকরণ বিতরণ ও বাগান পর্যবেক্ষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

কাঞ্চন পেয়ারা এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবিকার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের অন্যতম কৃষিপণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।