Image description

চট্টগ্রামের বাজারে হুট করেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। একে তো চালের চড়া দাম, এরমধ্যে প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৯০টাকার নিচে মিলছে না বেশিরভাগ সবজি। সাথে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজ, ডিম, আদা ও এলাচের দামও। প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম একসাথে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। অনেকে সাধ্যের মধ্যে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

রবিবার (১০ আগষ্ট) সপ্তাহের শুরুর দিনে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা, চকবাজার আর কাজির দেউরি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে এমনটা।

ক্রেতা রাহাত উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে এলে মন খারাপ হয়ে যায়। সবকিছুর দাম বাড়তি। ১শ টাকার নিচে তো ভালো সবজিই পাচ্ছি না। মাছের দামে তো রীতিমতো আগুন। ভরা মৌসুমেও অল্প দামে সাগরের মাছ কিনতে না পারাটা আমাদের দুর্ভাগ্য।'

চট্টগ্রাম নগরীর ও আশপাশের এলাকায় গত দু’সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, যেখান থেকে সাধারণত কৃষিজাত পণ্য চট্টগ্রামের বাজারে আসে, সেখানেও বৃষ্টি হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। আগের সপ্তাহসহ হিসেব করলে সবজির দাম কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। কাঁকরোল, ঝিঙা, পটল, ঢেঁড়শ, শসা, করলা প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১শ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বরবটির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দামও ৮০ থেকে ১শ টাকা। টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী, লাউ, মুলা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গাজর ১৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, শালগম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র মিষ্টিকুমড়ার দাম আছে নাগালের মধ্যে, প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুন্সীগঞ্জের আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচামরিচের দাম গত সপ্তাহেও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা ছিল। এ সপ্তাহে সেটা ১৮০ থেকে ২শ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ধনেপাতার দামও ১৮০ থেকে ২শ টাকা। তবে আগের মতোই শাকের মধ্যে কচুশাক ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া শাক ৫০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও লালশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯০ টাকায়। এর মধ্যে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বরং আমদানি করা পেঁয়াজের চেয়ে বাড়তি। দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২শ টাকা, ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হয়েছে, যা আগেরমতোই আছে।

ডিমের দাম এ সপ্তাহে ডজনপ্রতি অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে লইট্যা ২শ থেকে ২২০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩শ টাকা, কোরাল ৬শ থেকে ৯শ টাকা, রুপচান্দা ৫৫০ থেকে ৭শ টাকা, আইড় ৪শ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৬৫০ থেকে ১২শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ইলিশ এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালে আসেনি। খুচরা বাজারে এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২হাজার থেকে ২৪শ টাকা, ৫শ-৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫শ টাকা, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮শ-২ হাজার টাকা এবং জাটকা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭শ থেকে ৭৫০ টাকায়। দুই-আড়াই কেজি ওজনের বড় ইলিশ মাছ প্রতিকেজি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪শ থেকে ৪৫০ টাকা, টেংরা ৬শ থেকে ৭শ, পুঁটি ২শ থেকে ২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩শ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২শ থেকে ৩শ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং ৪শ থেকে ৪৫০, কৈ ২শ থেকে ২২০ এবং তেলাপিয়া ও পাঙাশ মিলছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকায়।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির দাম কেজিতে অন্তঃত ১শ টাকা বেড়ে ৬শ থেকে ৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩১০ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৫০ টাকা এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকায়। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসি ও পাঁঠা ছাগলের মাংস ১২শ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কর্ণফুলী কমপ্লেক্স মার্কেটে বাজার করতে এসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শামশুল আলম বলেন, প্রায় প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়ে চলছে। কিছু কিছু সবজি তো আর হাতের নাগালেই নেই। সিন্ডিকেট করেই সবকিছু বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাজারে কোনো তদারকি নেই। যেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে-সিন্ডিকেটের এই কারসাজি আর আমাদের দুঃখ।