
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ শিক্ষার্থী মো. মাহতাব রহমান ভূঁইয়া (১৫) চোখ খুলেছে এবং নিজে নিজে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সে বর্তমানে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চতুর্থ তলার আইসিইউর ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মাহতাবের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গেলেও তার শ্বাসনালী অক্ষত রয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে মাহতাবের বড় মামা মহিবুল হাসান শামীম এই তথ্য জানিয়েছেন। মাহতাব কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ ভূঁইয়া বাড়ির মো. মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়ার একমাত্র ছেলে। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংলিশ ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা ঢাকার উত্তরায় একটি বাসায় বসবাস করেন।
এদিকে গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা মাহতাবের মৃত্যুর গুজব জানিয়ে তার পরিবার জানায়, মাহতাব এখনো বেঁচে আছে। গুজব না ছড়িয়ে তার জন্য দোয়ার অনুরোধ।
আইসিইউ’র সামনে অপেক্ষায় থাকা মাহতাবের স্বজনরা জানান, মাহতাবের জন্য তার বাবা-মা পাগল প্রায়। তারা মাঝে মাঝে ছেলের জন্য বেহুশ হয়ে পড়ছেন, কিছু খাচ্ছেন না, সারাক্ষণ বিলাপ করছেন, পরিবারের সবাই হাসপাতালেই আছেন।
আইসিইউ’র ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসকদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করছি, তারা বলছেন- তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বার্ন ইউনিটের সামনে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে মাহতাবের বাবা অঝোরে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেটাকে আমার বুকে ফেরায় দাও, আমি আর সয্য করতে পারছি না। আমার বাবা জানি আইসিইউতে কেমন আছে! কি করছে!’
মাহতাবের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত মাহতাব রহমান ভূঁইয়া। তার বাবা প্রতিদিন তাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন।
ঘটনার দিন স্কুল ছুটির ঠিক ১০/১৫ মিনিট আগে হঠাৎ স্কুলের ভবনে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হতাহত হয়। এ সময় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের খুঁজে পেতে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ ঘটনায় সপ্তম শ্রেণীর মাহতাব রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেনাবাহিনী উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যায়। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
মাহতাবের মামা মহিবুল হাসান শামীম বলেন, ‘মাহতাব আমার ভাগিনা, সে এখনো বেঁচে আছে। সে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চতুর্থ তলার আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার চিকিৎসকরা অভিভাবকের পক্ষ থেকে আমাকে আইসিইউতে নিয়ে যান, সেখানে আমি নিজের চোখে আমার ভাগিনাকে দেখে এসেছি। সে চোখ খুলেছ, নিজে নিজে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। চিকিৎসকরা বলছেন- তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২৯ জন। নিহতদের মধ্যে ২২ জনের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের পরিবার ও আত্মীয়দের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এখনো ৭ জনের মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি।
Comments