
পটুয়াখালীর দুমকিতে ভবন সংকটে ব্যাবহার অনুপযোগী ড্যামযুক্ত পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে ৩১শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিৎিসা সেবা কার্যক্রম। অর্থছাড়ের জটিলতা আর ঠিকাদারের গাফেলতির কারণে নূতন ভবনের নির্মাণ কাজ ২বছর যাবৎ বন্ধ থাকায় সরকারি চিকিৎসা সেবা প্রদানের এ উপজেলা হাসপাতালটি এখন যেন গবাদিপশুর খোয়ারে পরিনত হয়েছে।
বৃষ্টির পানি ছাদ চুঁইয়ে ওয়ার্ডের ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে, ড্যামধরা দেয়াল ও ছাদের নীচে ফ্লোরে পানি জমায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে বিঘ্ন হচ্ছে। এমন অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে অসুস্থ রোগী ভর্তি করা হলে সুস্থ হওয়ার পরিবর্ত আরও অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্বচ্ছল পরিবারের মুমুর্ষ রুগীদের স্বজনরা ওয়ার্ডের পরিস্থিতি দেখে কেউ ভর্তি হতে না চাইলেও হতদরিদ্র অসহায় পরিবারের অসুস্থ মানুষ সরকারি চিকিৎসা সুবিধা পেতে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এর মধ্যেই চলছে উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।
গতকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে উপজেলা হাসপাতালটির এমন করুণ চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডা. মীর শহীদুল হাসান শাহীন বলেন, নির্মাণাধীন উপজেলা হাসপাতালের আধুনিক ভবনের নির্মাণ কাজ দু‘বছর যাবৎ ফেলে রাখায় পুরাতন ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। নূতন ভবন নির্মিত হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২সালে টেন্ডারকৃত হাসপাতাল ভবনের কার্যাদেশ পেয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন বরিশালের ঠিদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোদ্দার কনস্ট্রাকশন। বর্তমান ভবনের পেছনের দিকে অত্যাধুনিক ডিজাইনের হাসপাতাল ভবনের পাইলের কাজ সম্পন্ন করার পরেই নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পর ফেলে রাখা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক উজ্জল পোদ্দারের দাবি অর্থছাড় বন্ধ থাকায় নির্মাণ কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। অর্থ ছাড় হলেই পুন:রায় নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তবে অপর একটি সূত্রমতে ২০১৮সালের রেডকোডের টেন্ডারের নির্মাণ সামগ্রীর দাম বর্তমান বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় সমুহ লোকসান আশঙ্কায় ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখেছে। এভাবে টানা ২/৩বছর যাবৎ নির্মাণ কাজ ঝুলে থাকায় ভবন সংকটের মুখে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাধ্যহয়ে পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ভবনটির নীচতলায় আউট ডোর ও দোতলায় ইনডোরের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ড দু‘টির দেয়াল ও ফ্লোরে পানি চুঁইয়ে স্যাত স্যাতে হয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে বেশীরভাগ বেড বেডিং নস্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যেই চলছে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম।
ইনডোরে ভর্তি হওয়া রুগীর স্বজন জলিশা গ্রামের বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, দরজা, জানালা ভাংগা, রাতে ঝড়-বৃষ্টির পানি ঢুকে বেড বেডিং সব কিছুই ভিজে গেছে। এর মধ্যে কোন সুস্থ্যমানুষই থাকতে পারে না। সেখানে রুগী রাখা খুবই কস্টসাধ্য ও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। একই অভিযোগ পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রুগী আ: আজিজ হাওলাদারের।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন অভিযোগ, সংস্কারের অভাব, নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে এমন নোংরা পরিবেশে চিকিৎসার নামে দায়সারা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় হাসপাতালে কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মী, আয়া, পিয়নদের সীমাহীন গাফেলতির কারণে ওয়ার্ড দু‘টির পরিবেশ নোংরা, বেড বেডিং অপরিচ্ছন্ন হয়ে আছে। একটি সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ এমন হতে পারে না। শীঘ্রই তিনি পুরাতন ভবন সংস্কার, বেড, বেডিং পরিবর্তণ করত: কর্মচারিদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও উপজেলা প. প. কর্মকর্তা ডা. মীর শহিদুল হাসান শাহীন বলেন, অর্থছাড় হওয়ার ইতিবাচক খবর পেয়েছি। অর্থছাড় হলেই ঠিকাদার খুব শীঘ্রই নূতন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করবেন বলে আশাবাদি। নূতন ভবন নির্মিত হয়ে আর কোন সমস্য থাকবে না। তা ছাড়া পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ (শুক্রবার) আজকেই শুরু হয়েছে। সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে আপাতত: হাসপাতালের সকল সমস্য কেটে যাবে।
Comments