
গত এক সপ্তাহে মাদারীপুর জেলার পৃথক তিনটি স্থান থেকে শিশু ও নারীসহ তিনটি রহস্যজনক মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রতিটি ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। পুলিশ জানিয়েছে, তারা প্রতিটি ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে এবং দ্রুতই প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করা হবে।
শনাক্তহীন নারীর বস্তাবন্দী মরদেহ:
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের কুমার নদ থেকে বস্তাবন্দী এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা বস্তাবন্দী মরদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহটি উদ্ধার করে। তবে, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওই নারীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
পাটক্ষেতে সাবেক এলজিইডি কর্মকর্তার মরদেহ:
গত শনিবার দুপুরে মাদারীপুরের কালকিনিতে একটি পাটক্ষেত থেকে এলজিইডি'র সাবেক অফিস সহকারি আব্দুল জলিল শিকদারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আব্দুল জলিল কালকিনি উপজেলার এনায়েত নগর ইউনিয়নের মাঝেরকান্দি গ্রামের আহাম্মদ শিকদারের ছেলে।
রান্নাঘরে শিশুর ঝুলন্ত মরদেহ:
একই দিনে, শনিবার রাতে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামে রান্নাঘর থেকে ৬ বছর বয়সী শিশু রাখি মজুমদারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাখি একই গ্রামের শিশির মজুমদারের মেয়ে এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুরে রাখির পরিবারের সদস্যরা একটি বিয়ে বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। পরে রাখিকে ঘরে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে রান্নাঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মাদারীপুর জেলার সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেলাল রিজভী তিনটি পৃথক ঘটনাই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, "বস্তাবন্দী অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার" একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এছাড়া, "পাটক্ষেত থেকে আব্দুল জলিলের মৃতদেহ উদ্ধার" হওয়াটাও হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে। শিশু রাখি মজুমদারের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, "৬ বছরের এক শিশুতো নিজে নিজে আত্মহত্যা করেনি," কেউ না কেউ তাকে মেরে রান্নাঘরে ঝুলিয়ে রেখেছে।
রিজভীর মতে, এই তিনটি ঘটনাই রহস্যজনক এবং পুলিশ প্রশাসনের উচিত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত এর রহস্য উন্মোচন করা।
সোমবার সকালে মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হাছান জানান, কুমার নদ থেকে অজ্ঞাত নারীর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জেলা পুলিশের পাশাপাশি নৌ পুলিশও কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, কালকিনিতে পাটক্ষেত থেকে আব্দুল জলিলের মরদেহ উদ্ধার এবং রাজৈরে রান্নাঘর থেকে শিশুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা নিয়েও প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ সুপার আশা প্রকাশ করে বলেন, "খুব শীঘ্রই আমরা আসল ঘটনা উন্মোচন করতে পারব।"
Comments