Image description

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের চন্দলাড়া গ্রামের মো. আল মামুন ফকির ও মোসা. মারুফা বেগম দম্পতির কন্যার কথা যার আনুমানিক বয়স ১৮ বছর। অপরদিকে একই গ্রামের মো. ওয়াদুদ মড়ল ও পান্না আক্তার দম্পতির ছেলে তমজিদ আহম্মেদ যার আনুমানিক বয়স ২৪ বছর। দুই পরিবারের বসতবাড়ি প্রায় পাশাপাশি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আল মামুন ফকির ও তমজিদ আহম্মেদ দুবাই পাশাপাশি থাকতো, কিছুদিন পর আল মামুন ফকির দেশে চলে আসেন। আল মামুন ফকির দেশে চলে আসার পর তমজিদ আহম্মেদ বিভিন্ন সময়ে আল মামুন ফকিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করতো। আল মামুন ফকির-মোসা. মারুফা বেগম দম্পতির কন্যা জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। আনুমানিক একবছর পূর্বে দুবাই প্রবাসী তমজিদ আহম্মেদ মুঠোফোনে আল মামুন ফকিরের মুঠোফোনে কল দিলে আল মামুন ফকিরের মেয়ে কল রিসিভ করলে তাদের দু'জনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা হয়। এইভাবে বিভিন্ন সময়ে কথাবার্তা হওয়ার পর প্রবাসী তমজিদ আহম্মেদ আল মামুন ফকিরের মেয়েকে ফুসলিয়ে কৌশলে তার ব্যাক্তিগত মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে নেয়। একপর্যায়ে দীর্ঘদিন কথা বলার পর তাদের দু'জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পর বিষয়টি দুই পরিবার মধ্যে জানাজানি হলে উভয় পরিবারের লোকজন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় তমজিদ আহম্মেদ দুবাই থেকে দেশে আসার পর ভাল একটি দিন তারিখ নির্ধারণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে এতো সুন্দর আলোচনায় দু'পক্ষই খুশি হয়েছিল। সেই মোতাবেক চলতি মাসের গত ৪ জুন তমজিদ আহম্মেদ দুবাই থেকে দেশে আসে। দেশে আসার পর প্রেমিকার সাথে প্রকাশ্যে দেখা-সাক্ষাৎ করে যেহেতু দু'জনের বিয়ের কথা দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া ছিল। ক'দিন পরেই যেহেতু বিয়ে তাই মেয়ের বাবা-মা তাদের মেয়েকে তমজিদ আহম্মেদ এর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও মোবাইলে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেনি। তবে বিয়ের আগেই ছেলে-মেয়ে দেখা-সাক্ষাৎ গ্রামের লোকজনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

চলতি মাসের গত ৫ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে আল মামুন ফকিরের মেয়েকে গোপনে নিয়ে বিয়ে করবে বলে ফুসলাইয়া, প্রলোভন দেখাইয়া, মনভুলানো কথা বলে কৌশলে মেয়েটিকে অপহরণ করিয়া তমজিদ আহম্মেদ তার নিজের বাড়িতে নিয়ে নিয়ে তমজিদ আহম্মেদ এর বসতবাড়ীর টিনের পরিত্যক্ত ঘরে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। এছাড়াও পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন সময়ে মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করে তমজিদ আহম্মেদ। পরে একদিন তমজিদ আহম্মেদ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে তার বন্ধুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে ভৈরব আবাসিক হোটেলে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি তার প্রেমিকার মিথ্যা আশ্বাস বুঝতে না পেরে সরল মনে প্রেমিক তমজিদ আহম্মেদ এর কথায় তার সতিত্ব হারিয়ে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানায়। যত ভুলেই থাক না কেন মেয়েকে তো আর মেরে ফেলতে পারবে না, তাই মেয়েটির বাবা-মা অভিযুক্ত প্রেমিক তমজিদ আহম্মেদ এর বাবা মায়ের কাছে বিষয়টি জানিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দিলে অভিযুক্ত প্রেমিক তমজিদ আহম্মেদ বিয়ে করতে তালবাহানা শুরু করে।

একপর্যায়ে অভিযুক্ত প্রেমিক তমজিদ আহম্মেদ এর বাব-মা তমজিদকে অন্যত্র বিয়ে করানোর জন্য বিভিন্ন এলাকায় বিয়ের পাত্রী দেখা শুরু করে এবং কিছুদিন পর বিয়ে ঠিক হয় তমজিদের। পরবর্তীতে আবার মেয়ের বাবা তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ছেলের বাড়িতে গিয়ে ছেলের পরিবারকে অনুরোধ করিলে তারা মেয়ের বাবার সহ অন্যান্য লোকজনদের সাথে খারাপ আচরণ করে।

কোন উপায়ন্তর না পেয়ে নারী জীবনের সর্বনাশের কথা চিন্তা করে লোকলজ্জার কথা মাথায় না নিয়ে অবশেষে প্রেমিক তমজিদ আহম্মেদ এর বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেয় মেয়েটি।

পরবর্তীতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে মেয়ের মা মোসা. মারুফা বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, অপহরণ পূর্বক ধর্ষণ ও সহায়তা করার অপরাধে প্রেমিক তমজিদ আহম্মেদ সহ তার বাবা-মাকে আসামী করে কেন্দুয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এবিষয়ে কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমানের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- ভিকটিমের মা বাদী হয়ে তমজিদ আহম্মেদ ও তার বাবা-মাকে আসামী করে ভিকটিমের মা মামলা দায়ের করেছেন। জবানবন্দী ও মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ভিকটিমকে নেত্রকোণা পাঠানো হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।