Image description

পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দুর্গমতার কারণে এই সংকট প্রকট, যেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকার কারণে রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করতে হচ্ছে। দুর্গমতার কারণে অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন পদে চিকিৎসক সংকট রয়েছে, যা স্বাস্থ্যসেবাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে ছোটখাটো রোগের জন্যও রোগীদের রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল বা অন্যান্য জেলা শহরে রেফার্ড করা হচ্ছে, যা রোগীদের জন্য অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় সাপেক্ষ। এছাড়া, পুরনো ও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রোগীদের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরিবেশও অনুকূল নয়।
 
সচেতন নাগরিকরা বলেছেন, দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটিতে চিকিৎসক সংকট একটি গুরুতর সমস্যা যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। এছাড়াও, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন করা যেতে পারে। এই সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, স্বাস্থ্যসেবা আরও ভেঙে পরার সম্ভবনা রয়েছে।

রাঙ্গামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ৯৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসক কর্মরত রয়েছে মাত্র ৫৪ জন, এরমধ্যে ৪৫টি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। 

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদে ১২ জনের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০ জন চিকিৎসক। এতে দুইটি পদ শূন্য রয়েছে। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় মেডিকেল অফিসার পদের ৭ জনের বিপরীতে চিকিৎসক কর্মরত রয়েছে ৪ জন, এরমধ্যে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ৩ জন। ৭টি পদই শূন্য রয়েছে। 

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন ৭ জন। ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসক পদের সংখ্যা ৬টি, এরমধ্যে কর্মরত রয়েছে ৩জন। ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ৪ জন। ২টি পদ শূন্য রয়েছে। 

নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসক পদের সংখ্যা ৭টির মধ্যে কর্মরত রয়েছে ১ জন। এতে ৬টি পদ শূন্য রয়েছে। জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক পদের সংখ্যা ৭টির মধ্যে কর্মরত রয়েছে ৩জন। এতে ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। 

কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসক পদের সংখ্যা ৮টির মধ্যে কর্মরত রয়েছে ৩ জন। এতে ৫টি পদ শূন্য রয়েছে। বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসক পদের সংখ্যা ৮টির মধ্যে কর্মরত রয়েছে ২ জন। এতে ৬টি পদ শূন্য রয়েছে।  তবে ১০টি উপজেলার মধ্যে মেডিকেল অফিসার মঞ্জুরীকৃত পদ শূন্য নেই সিভিল সার্জন কার্যালয়, কাপ্তাই উপজেলা, বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকে।

রাঙ্গামাটি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. অমিত দে জানান, রাঙ্গামাটিতে এখন চিকিৎসক সংকট খুবই তীব্র। মোট পদের অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক পদ সব সময় শূন্য থাকে। এই বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে এবং মহাপরিচালক ও মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে। ওনারা আশ্বাস্ত করেছেন, রাঙ্গামাটিতে চিকিৎসক নিয়োগ দিবেন। 

তিনি আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিকাল থেকেই একটি দুর্গম এলাকা। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে চিকিৎসকরা আসতে চাই না। কারণ, দুর্গম এলাকায় যাদের পদায়ন করা হয়, তাদের যেভাবে ইনসেনটিভ দেয়ার কথা বলে তারা সেইভাবে অন্যান্য উপজেলার তুলনায় ইনস্টেনটিভ পাই না। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে পার্বত্য জেলা আসার পরও যাওয়ার সময়ও তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, বদলি বা চলে যাওয়ার সময় তাদের ছাড়পত্র পাওয়া ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে কেউ পার্বত্য দুর্গম এলাকায় আসতে বা থাকতে চান না। তাই সকল চিকিৎসকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে পাহাড়ে চাকরি করার জন্য বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনে আমরা মতামত দিয়েছি। 

এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের একটি স্থানান্তরিত বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ কার্যক্রম জেলা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। রাঙ্গামাটিতে তীব্র চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এতে মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট নিরসনে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। অতি শিগগিরই চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে বলে তিনি জানান।