Image description

মানিকগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত জবানবন্দির পর সরেজমিন পরিদর্শন করেছে তদন্ত কমিটি। অভিযোগ তদন্ত শেষ করে এ সপ্তাহেই তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। 

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান মাসুদ রানার (৪৩) বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের নয়জন সদস্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। 

তদন্ত কমিটিতে সদর উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমানকে প্রদান করে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রিনাৎ ফৌজিয়া ও উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানকে তদন্তভার দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে তারা (ইউপি সদস্যগণ) মাসুদ রানার অব্যাহতি চেয়ে নতুন প্যানেল চেয়ারম্যান অথবা প্রশাসক নিয়োগের দাবি করেছেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পর-পর গড়পাড়া ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আস্থাভাজন আফছার উদ্দিন সরকার গাঁ ঢাকা দেন। এরপর পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য দেওয়ান মাসুদ রানাকে ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

তবে মাসুদ রানা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এককভাবে বাস্তবায়ন করেন। এ নিয়ে পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে বলে জানা গেছে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের জন্য আসবাবপত্র কেনার একটি প্রকল্পে ১৪টি অফিশিয়াল টেবিল, ১৩টি আর্মড ভিজিটর চেয়ার ও ৫০টি প্লাস্টিক চেয়ার কেনার কথা থাকলেও মাসুদ রানা তা না করে বরাদ্দ করা অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। পরিষদে নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহ করে অটবি ব্র্যান্ডের ভুয়া ভাউচার দাখিল করার অভিযোগ রয়েছে। ট্যাক্স আদায় করা ৫০ হাজার টাকা পরিষদের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। চৌকিদার ট্যাক্স থেকে সংগ্রহ করা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিজের নামে অগ্রিম বেতন হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

এ ছাড়া ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রের আয় থেকেও মাসিক ভিত্তিতে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ, গত ঈদুল ফিতরের আগে ১৫০টি শাড়ি বিতরণের সময় পরিষদের প্রতিটি সদস্যকে ৪টি করে শাড়ি বরাদ্দ দিয়ে বাকি শাড়ি নিজের অনুসারী ও স্বজনদের মধ্যে বিতরণ, উন্নয়ন প্রকল্পের বণ্টনে স্বজনপ্রীতি, অধিকাংশ প্রকল্প নিজের ওয়ার্ডে বরাদ্দ, ৫৮০টি ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে ৮০টি কার্ড সদস্যদের দিয়ে ৫০০ ভিজিএফ কার্ড নিজের ইচ্ছামতো বণ্টন করাসহ পরিষদের নতুন প্রকল্পের ১০-১৫ শতাংশ ঘুষ দাবি করার অভিযোগ রয়েছে মাসুদ রানার বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলাল হোসেন জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাসুদ রানার অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসক এবং সদর ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযোগপত্রে আমিসহ আরও আটজন ইউপি সদস্য স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করেছেন। পরিষদে আমরা সবাই সমান সদস্য হলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর মাসুদ রানা আমাদের গুরুত্ব না দিয়ে এককভাবে পরিষদ পরিচালনা করছেন। আমরা এমন বৈষম্য চাই না। আমরা মাসুদ রানার দুর্নীতির তদন্ত চাই।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান দেওয়ান মাসুদ রানা বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো কোনোভাবেই সত্য নয়। আমার ইউনিয়নের একজন লোক যদি বলতে পারে আমি অনৈতিকভাবে কারও কাছ থেকে ১ টাকা গ্রহণ করেছি। আমি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দেব। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

তদন্ত কমিটির প্রধান সদর উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, অভিযোগকারী ইউপি সদস্যদের লিখিত জবানবন্দীর প্রেক্ষিতে আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। আমরা এ সপ্তাহেই তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তর করতে সমর্থ হবো।