
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে চোর সন্দেহে ফরিদুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবককে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের চর তেলিজানা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
ভুক্তভোগী ফরিদুল ইসলামের মা ফরিদা খাতুন জানান, তার ছেলে অভিযুক্ত রাকিব ও ইলিয়াসের বাড়িতে কাজ করত। গত শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ করেই তার বিরুদ্ধে ৫ হাজার টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়। পরিবারকে না জানিয়েই ফরিদুলকে ইউক্যালিপটাস গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয় এবং তাকে জোর করে 'চাউল পড়া' খাওয়ানো হয়। তিনি বারবার তার ছেলে নির্দোষ দাবি করলেও মারধর থামানো হয়নি। স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে আসার পর মারধর বন্ধ হয়।
ফরিদা খাতুন আরও অভিযোগ করেন, তিন মাস আগে এলাকার সাব্বির তার শাশুড়ির (যিনি একজন প্রতিবন্ধী) একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দখল করে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করার পরও ফরিদুলকে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় ফরিদুলকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয় এবং পুনরায় মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন ফরিদা।
ফরিদুল ইসলামের বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, তাকে না জানিয়েই তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে। ছেলেকে হাসপাতালে নিতে চাইলে অভিযুক্তরা তার গলা চেপে ধরে। তিনি স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার চেয়েও কোনো সুরাহা পাননি। মাতব্বররা এলাকায় বসে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাকে থানায় যেতে দেননি বলেও অভিযোগ করেন শহিদুল। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবী মো. আব্দুল হাকিম ও স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল হোসেন জানান, এ ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো পক্ষই তাদের কথা শোনেনি।
অভিযুক্ত রাকিবের ভাই ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি 'ভুল নম্বর' বলে ফোন কেটে দেন। রাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নামাজে যাচ্ছেন বলে ফোন কেটে দেন।
রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেএম মাসুদ রানা জানান, এ বিষয়ে থানা পুলিশকে কেউ জানায়নি। খবর পেলে অবশ্যই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিত। তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ জমা দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরও জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments