দুই কি.মি রাস্তার কাজ দুই বছরেও শেষ করেনি ঠিকাদার, জনভোগান্তি চরমে

চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের উত্তর সরেঙ্গা ও ফকির পাড়ার প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার পর্যন্ত সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ এখন এলাকাবাসীর জন্য এক স্থায়ী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। দুই বছর আগে শুরু হওয়া সড়ক সংস্কার কাজটি জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখে গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার।
গত মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে ও স্থায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর সরেঙ্গা হযরত আবদুস ছমদ শাহ সড়ক খুঁড়ে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে মাটির সড়কটি। কাদা মাটি মিশে কাদায় একাকার সড়কে যাতায়াত করছেন ওই এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা রাস্তাটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের উত্তর সরেঙ্গা ও ফকির পাড়ার প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার মানুষদের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। ২০২৩ সালের দিকে আওয়ামী লীগের এক ঠিকাদার সড়কটি খুঁড়ে আর কোনো কাজ করেনি। এরপর থেকে সড়ক দিয়ে সবধরণের যানবাহন বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি হলে পানি আর কাদায় ভরে যায় এ সড়কটি। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অফিসমুখী কর্মজীবী, কৃষকসহ রোগিদেরও যাতায়াতের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, রায়পুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সরেঙ্গা হযরত আবদুস সমদ শাহ সড়কটি সংস্কারের জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে ২০২৩ সালে টেন্ডার পেয়ে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার মোহাম্মদ ইব্রাহীম। ২ হাজার ৮৮ মিটার সড়কের মধ্যে ৮৫০ মিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ শেষ করলেও এখনও বাকি রয়েছে ১ হাজার ২৩৮ মিটার সড়কের কাজ।
স্থানীয় পূর্ব বরৈয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিতিয়া আকতার (১৪) বলেন, সড়কে কাদা ও পানি জমে থাকায় স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। অনেকসময় পা পিছলে পড়ে গেলে সেদিন আর স্কুলে যেতে পারিনা।
ওই এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আবদুল মোনাফ (৫৫) বলেন, সড়কটি খুঁড়ে ফেলে না রাখলে মানুষ অন্তত হাঁটা-চলা করতে পারত; রোগি ও বৃদ্ধদের এতদুর হেঁটে আসা কিয়ামতের কস্টটা হতো না। সরকারের কাছে অনুরোধ যেন দ্রুত সড়কটি সংস্কার কাজ শেষ করেন।
ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সড়কটি দিয়ে দুই গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীছাড়াও হাজারও মানুষের যাতায়াত। ঠিকাদারের অবহেলায় বিগত দুই বছর ধরে কষ্টের শেষ নেই এলাকাবাসীর। ঠিকাদারকে কাজটি শেষ করতে বললে তিনি ক্ষমতার দাপট দেখান সকলের সঙ্গে।’
তবে ঠিকাদার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি বলেন, স্থানীয় এক ব্যক্তি একটি নোটিশও দিয়েছিল, সেটাও সমাধান করেছি। এখন বৃষ্টির কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কাজ চলমান রয়েছে বলেও ঠিকাদার দাবী করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘শীঘ্রই কাজটি শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আকতার বলেন, ‘সড়কটির বিষয়ে জেনেছি, বর্ষায় মানুষের জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দ্রুত কাজ শেষ করতে উপজেলা প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
Comments