
লালমনিরহাটে হঠাৎ করেই ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ। ভাইরাসজনিত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে হাজারো গরু ও মহিষ। ওষুধেও কাজ না হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন গবাদি পশুর খামারিরা। গত ৭ দিনে জেলায় অর্ধশতাধিক গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে প্রাণী সম্পদ বিভাগের দাবি, সরকারিভাবে এ রোগের ভ্যাকসিন আসেনি এখনো।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লাম্পি স্কিন রোগ মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হলেও গবাদি পশুর জন্য এটি মারাত্মক সংক্রামক একটি রোগ। এটি ছোঁয়াচে, এটি এক পশু থেকে অন্য পশুতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত পশুর সংখ্যা। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত গরুর জ্বর হয়, শরীর ফুলে ওঠে, ত্বকে গুটি দেখা দেয়, মুখ দিয়ে লালা ঝরে এবং ধীরে ধীরে পশুটি দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পশুর মৃত্যু ঘটে। আক্রান্ত পশুর পাশে সুস্থ পশু থাকলে সেখানেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত পশুকে দ্রুত আলাদা স্থানে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়।
এ পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছেন। তারা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসংক্রান্ত সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসাপত্র নিয়েও তেমন কোনো সুফল মিলছে না বলেও খামারিদের অভিযোগ। এ রোগের চিকিৎসাও অনেকটা ব্যয়বহুল হওয়ায় বড্ড বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র খামারি ও কৃষকেরা। ফলে ধীরে ধীরে গরু মারা যাচ্ছে।
খামারিদের দাবি, গত ঈদের আগে কোরবানির পশুর হাটে সীমান্ত অতিক্রম করে আসা ভারতীয় গরুর মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার মধ্যে সর্বাধিক ছড়িয়েছে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া পাটগ্রাম উপজেলায়। সীমান্ত গ্রামগুলো থেকে এ রোগ বেশি ছড়িয়েছে। গত ৭ দিনে জেলায় অর্ধশতাধিক গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পাটগ্রাম এলাকার খামারি মোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার খামারে ১২টি গরু আছে। এর মধ্যে পাঁচটি গরু লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুগুলোর শরীরে ফোলা দেখা যাচ্ছে, জ্বর হচ্ছে আর মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। চিকিৎসা করাতে অনেক খরচ হচ্ছে, অথচ ওষুধও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।’
হাতীবান্ধার ধুবনী এলাকার জুয়েল ইসলাম ও দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের আ: ছালাম জানান, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের ৩টি গরু মারা গেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচার খামারি শাহ আলম বলেন, খামারের একটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রায় ২০ দিন ধরে চিকিৎসা চললেও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। চিকিৎসা খরচও অনেকটা ব্যয়বহুল। ফলে খামারে খরচ বেড়ে গেছে। লোকসানের শঙ্কায় রয়েছি।
বড়খাতা এলাকার খামারি একরামুল বলেন, ‘এই রোগে গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। ওজন কমে যায়। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেছি। আক্রান্ত পশুদের আলাদা করে রাখা, কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লাম্পি স্কিন প্রতিরোধে সরকারিভাবে ভ্যাকসিন প্রস্তুত হলেও তা পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। লালমনিরহাটে সরকারিভাবে এ রোগের ভ্যাকসিন আসেনি। আপাতত বাজারে বেসরকারিভাবে বাজারজাত করা ভ্যাকসিন দিতে বলা হচ্ছে। সর্বোপরি আক্রান্ত হলে খামারিদের প্রথমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যেতে বলা হচ্ছে। এ রোগের চিকিৎসায় একটু সময় লাগে। তবে কী পরিমাণ আক্রান্ত হয়েছে এমন কোনো তথ্য তাঁর দপ্তরে নেই বলেও জানান তিনি।
Comments