Image description

ফের আলোচনায় এলেন ফ্যাসিবাদের দোসর খ্যাত মাউশিতে ওএসডি থাকা পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের সংযুক্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফাতেমা হেরেন। এবার এইচএসসি প্রথম বর্ষের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার ফি কমানোর দাবিতে বৃষ্টিতে ভিজে তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করায় আবারও আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।

বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ড. ফাতেমা হেরেনের বিরুদ্ধে 'আওয়ামী লীগের দোসরের ঠিকানা এই কলেজে থাকবেনা', 'পরীক্ষার ফি'র নামে চাঁদাবাজি চলবে না' শ্লোগানে এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। এতে অংশ নেয় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের কাছ থেকে  ১৬৯০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পরীক্ষার ফি ধার্য করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোন রশিদ না দিয়ে সাদা কাগজে লিখে স্লিপ দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, পার্শ্ববর্তী আমতলী সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কম টাকা নেয়া হচ্ছে। অথচ কলাপাড়ায় তাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা ধার্য করেছে। এ নিয়ে তারা প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিঁনি তাদের কথা শুনেননি। তাই বাধ্য হয়ে তাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। পরীক্ষার ফি না কমানো হলে তাদের এই আন্দোলন চলবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

এর আগে অনার্স ফরম ফিলাপের সময় অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগে ইউএনও'র কাছে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে দেখা যায় পরিচয় পত্র, ছাত্র সংসদ, ম্যাগাজিন, রোভার স্কাউট, বিএনসি, গার্লস গাইড, পরিবহনের কোন কার্যক্রম না থাকলেও এসব খাত উল্লেখ করে ১৬৯০ টাকা আদায় করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। যা দিতে অনিচ্ছুক ছিল শিক্ষার্থীরা। পরে ইউএনও'র হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়।          

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারী এমবি কলেজের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ফাতেমা হেরেন ৫ আগষ্টের পর ভোল পাল্টে বিএনপি ঘনিষ্ঠ ক'জন শিক্ষক ও হেভিওয়েট নেতাদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে এখন বিএনপি ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। কলেজের ব্যাংক হিসাবের টাকা সরকারী তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশনা এড়িয়ে তিঁনি  ৪৪ লক্ষ টাকা দিয়ে নিজ কক্ষের স্যেন্দর্য্যবর্ধন এসি লাগানো সহ বিবিধ খাতে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে খরচ করেন। এছাড়া কলেজ পুকুরের মাছ, ক্যাম্পাসের গাছ ও প্রায় আড়াই টন লোহার দরজা, জানালা ভাঙ্গারী ক্রেতা চাঁনমিয়ার কাছে বিক্রী করে অর্জিত টাকা সরকারী তহবিলে জমা দেননি।      

এ বিষয়ে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফাতেমা হেরেন তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করা হয়নি। আজ আমি কলেজের একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলাম, তারা আমার কাছে না এসে 'জয় বাংলা' শ্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে।'

অধ্যক্ষ আরও বলেন, 'সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা ত্রৈমাসিক পরীক্ষা দেয়নি তাদের কাছে ডিউ ছিল, যা এখন বেশী মনে হচ্ছে তাদের কাছে। অন্য সরকারী কলেজের চেয়ে আরও কম টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা না বুঝে বিক্ষোভ করেছে। বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে সমাধান করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের টাকা রকেটে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়ায় তাদের পাওনা টাকার স্লিপ দেয়া হচ্ছে। রকেটে জমা দেয়ার স্লিপ দেখালে তাদেরকে পরীক্ষার প্রবেশ পত্র দেয়া হচ্ছে। কলেজের সকল আর্থিক বিষয় যথাযথ ভাবে মেইনটেইন করা হয় বলেও দাবী তার।'  

প্রসঙ্গত, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েও গত ২৭ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে যোগদান করতে পারেননি তিঁনি। ড. ফাতেমা হেরেন বিএম কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে যোগদানের চেষ্টা করলেও ছাত্রদের বাঁধায় বাতিল হয়ে যায়।  শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে সুবিধাভোগী ছিলেন অধ্যাপক ড. ফাতেমা হেরেন।