Image description

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মানিকগঞ্জের এক তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা নিষ্পত্তি করেছেন ইউপি সদস্য ও চন্ডিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম- আহবায়ক দুলাল ফকির। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে তা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৩ জুন) বিকেলে চন্ডিপুর ইউপি সদস্য দুলাল ফকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

গত মঙ্গলবার (১০ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলার চন্ডিপুর বাজারের একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন এমন অপরাধের বিচার সালিশে করা ঠিক হয়নি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। 

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চরবলেশ্বর গ্রামের ইউনুস মৃর্ধার ছেলে রুবেল মৃধা (৩৫) মানিকগঞ্জ থেকে পাথরঘাটা উপজেলায় প্রেমিকের বাড়িতে যাওয়ার পথে ওই তরুণী পিরোজপুরে রাত ১২ টার দিকে বাস থেকে নামলে অটো চালক রুবেল মৃধা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তার বালিপাড়া ভাড়ার বাসায় নিয়ে আসে।

পরে রাত ২ টার দিকে বাসায় তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টা করে রুবেল। এসময় তরুণীর ডাক-চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। পরের দিন বুধবার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল ফকির অভিযুক্ত রুবেলের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করলে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে রুবেলকে ছেড়ে দেয়। তবে সালিশির পর তরুণীর কোনো হদিশ দিচ্ছেন না ইউপি সদস্য দুলাল ফকির। 

ঘটনার সময় ওই তরুণীর ভিডিও স্বীকারোক্তিতে বলেন, মঙ্গলবার সকালে পাথরঘাটায় প্রেমিকের বাড়িতে যাওয়ার জন্য মানিকগঞ্জ থেকে বাসে করে রওনা হই। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বাস থেকে পিরোজপুরে নামিয়ে দিলে রাত বেশি হওয়ায় পাথরঘাটায় যাওয়া হয়নি। পরে রুবেলের সাথে ১২ টার দিকে দেখা হলে সে বলে আমার বাসায় বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই আছে, সেখানে তুমি থাকতে পারবা। তারপর তার বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে পরিবারের কাউকে না দেখায় দরজার পাশে বসে থাকি। কিছুক্ষণ পরে রুবেল আমার কাছে এসে অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করলে আমি দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করি। পরে আবারও আমাকে ধরে জোরাজোরি করলে আমি ডাক-চিৎকার দেই, তখন স্থানীয় লোকজন চলে আসে। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ওই ইউপি সদস্য দুলাল ফকির বলেন, আমি সকালে জানতে পেরে মিমাংসা করে ওই মেয়েকে পাথরঘাটায় যে ছেলের বাড়িতে যেতে চেয়েছিল ওই মেয়েকে তার পরিবার ও স্থানীয় মেম্বারসহ লোকজনের উপস্থিতিতে সেখানেই দিয়ে এসেছি। 

ওই তরুণীর সাথে কথা বলতে চাইলে দুলাল ফকির একদিন সময় নিলেও তিনদিন পার হলেও সন্ধান দিতে পারেনি। তিনি বলেন, মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের কাগজটা গ্রামের বাড়ি থেকে আনা হলে ওদের বিবাহর পর আপনারা ওর সাথে ফোনে কথা বলতে পারবেন। এবং ওই তরুণীর সন্ধান চাইলে না দিয়ে এই ইউপি সদস্য এড়িয়ে যান। মেয়েটি কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন স্থানের নাম বলেন। 

অভিযুক্ত রুবেল মৃধার পিতা ইউনুস মৃর্ধা বলেন, ইউপি সদস্য দুলাল ফকিরসহ স্থানীয় কয়েকজনে টাকার বিনিময়ে মিমাংসা করে দিয়েছেন। 

চন্ডিপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আব্দুল হাই জোমাদ্দার বলেন, এ ঘটনা শুনেছি। তবে প্রমাণ পেলে উপজেলা নেতৃবৃন্দকে বলবো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। 

চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জু জানান, আমি লোকমুখে শুনেছি। এ বিষয় এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। 

ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মারুফ হোসেন বলেন, ধর্ষণের চেষ্টা হয়ে থাকলে তা আপোষ করার কোনো সুযোগ নেই। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে, মামলা গ্রহণ করা হবে।