
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী সাঈদখালী সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু চার ভাগের এক ভাগ কাজও শেষ হয়নি। দুই কিলোমিটার জুড়ে ইটের খোয়া, বালু বিছিয়ে রাখা হয়েছে। বিকল্প চলাচলের জন্য কালভার্ট তৈরি করা হলেও দুই পাশে মাটি না থাকায় এলাকাবাসী সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। পানির তোড়ে একাধিক স্থানে গর্ত হয়ে যাওয়ায় চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শুধু এ সড়কটি নয়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ৯ টি সড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাড়েরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে হোগলাবুনিয়া, চাড়াখালী জামে মসজিদ থেকে কলেজ, পত্তাশী কেওড়ার মোড় থেকে খেজুরতলা বাজার, কলারণ জমাদ্দার হাট থেকে কাপালিবাড়ী, পাড়েরহাটের চালনা ব্রিজ থেকে বৌডুবি, চন্ডীপুর স্টিল ব্রিজ থেকে খোলপটুয়া, পত্তাশী বাজার থেকে কান বাগড়ী ও ইন্দুরকানী বাজারের প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক। কাজ না হওয়ায় সড়কগুলো চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। চলমান এসব সড়ক সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি)।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ভাঙাচোরা সড়কের কারণে দিনের পর দিন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। সংস্কার কাজ দেরি হওয়ায় সেই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে বৃষ্টিতে অধিকাংশ সড়কের বালুর আস্তরণ সরে গেছে। দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সড়কগুলোতে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে তাতে পানি জমে এবং শুকনা মৌসুমে ওড়ে ধুলা।
এলজিইডি সূত্র জানায়, পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ৯টি সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আট কোটি টাকার কাজটি পায় পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজের (ইফটিইসিএল) প্রতিষ্ঠান। মিরাজ আবার পাঁচ ইউনিয়নের পাঁচ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেন। এর মধ্যে মিরাজ ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে জেলা হিসাবরক্ষণ ও এলজিইডি অফিসের কিছু কর্তার সহায়তায় আট কোট টাকা তুলে নেন। প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর এ অনিয়মের বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর ঠিকাদার মিরাজসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতা ও চেয়ারম্যানদের অনেকেই পলাতক। কেউ জেলহাজতে আছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে সড়কের এ অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়। এর পর দুদক অভিযান চালিয়ে সত্যতা পেয়ে ঠিকাদার মিরাজুল ইসলাম মিরাজ ও তাঁর পরিবারের সদস্য, জেলা হিসাবরক্ষণ ও এলজিইডি অফিসের ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজন জেলহাজতে রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার মিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কথা হয় উপজেলার চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কাজ শুরু করেছিলাম। ৫৫ লাখ টাকা খরচও করেছি। কিন্তু একটি টাকাও পাইনি। আমার মতো আরও পাঁচ চেয়ারম্যান কাজ নিয়ে কোনো টাকা পাননি। ঠিকাদার ঠিকই টাকা তুলে নিয়েছেন।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী লায়লা মিথুন জানান, নির্মাণাধীন ৯ সড়কসহ পিরোজপুরের বেশ কয়টি প্রকল্পে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুদক। ঠিকাদারসহ যারা জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও দুদকের তদন্ত অব্যাহত আছে।
Comments