Image description

একপাশে সমুদ্র ও অন্যপাশে অরণ্যঘেরা সারিবদ্ধ পাহাড়, বুক চিড়ে চলে যাওয়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক, এসব মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। নয়নাভিরাম সমুদ্র ও পাহাড়ি ঝরনাগুলো যেন মৃত্যুকূপ! প্রতি বছর বিশেষ করে বর্ষাকালে সমদ্র ও ঝরনায় পানি বেশি থাকায় পাহাড়, সমুদ্র সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত না করা, পাহাড়ি পথ সম্পর্কে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা না থাকা, সাঁতার না জানা, প্রশিক্ষিত গাইডের অভাবে এসব প্রাণহানি ঘটছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। 

বিগত ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত অসতর্কতায় প্রাণ হারিয়েছেন নয়জন। প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাব, প্রয়োজনীয় উদ্ধার সরঞ্জামের সংকট, পর্যটকদের অসতর্কতা ও অতিউৎসাহের কারণেই এসব প্রাণহানি ঘটছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ঝরনা ও সমুদ্রসৈকতে অব্যাহত প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এখনো আগত পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি প্রশাসন। এ ছাড়া ঝরনা ও সমুদ্রসৈকতের প্রবেশদ্বার গুলোতে পর্যটকদের সচেতনতায় রাখা হয়নি কোনো নির্দেশনা,সমুদ্রসৈকতগুলোতে নেই লাইফগার্ড কিংবা বিপদ-পরবর্তী সময়ে উদ্ধারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সৈকতের গুর“ত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে জাল দেওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিমুক্ত গোসলের স্থান নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কোন পর্যটক ডুবে গেলে দ্রুত উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিস এগিয়ে গেলেও ডুবুরি দল না থাকায় পরতে হয় বিপত্তিতে। ডুবুরির অপেক্ষা করতে হয় অনেক সময়। সীতাকুন্ড উপজেলায় রয়েছে দুইটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। একটি সীতাকুন্ড পৌরসভা এরিয়া আরেকটি কুমিরা এলাকায়। এ দুটি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে নেই ডুবুরি দল। কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে ডুবুরি দল আসে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে। এতে দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায়। সীতাকুন্ডের কোন লেকে কিংবা সমুদ্র কোন পর্যটক ডুকে গেলে তাৎক্ষণিক সীতাকুন্ড কিংবা কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেও ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে পারেনা। খবর দিতে হয় চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদে। এতদুর থেকে আসার পথে মহাসড়কে অনেক সময় যানজটে আটকে যেতে হয়। ফলে ডুবুরি টিমও সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারেনা। ফলে উদ্ধার কার্যক্রমে চালানো যায় না। সীতাকুন্ড উপজেলায় সমুদ্রে এবং লেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার বেশি। আর এসব দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজে এ অঞ্চলে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। কিন্তু সীতাকুন্ড এবং কুমিরা এলাকায় দুইটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে কোন ডুবুরি দল নাই।

নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, সীতাকুণ্ডে সমুদ্র ও ঝরনা দেখতে এসে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত অসতর্কতায় প্রাণ হারিয়েছেন নয় জন। এর মধ্যে ঝরনা দেখতে এসে পাঁচ এবং সমুদ্রে গোসলে নেমে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন পর্যটক। তাঁদের মধ্যে সাতজনই শিক্ষার্থী , একজন চাকরিজীবী ও একজন শ্রমিক।

পর্যটকদের অভিযোগ,সৈকতে সতর্কতামূলক কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় তাঁরা ঘুরতে এসে ২০২২ সালে থেকে এপর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু, নিহতদের সাতজন শিক্ষার্থী, একজন চাকরিজীবী ও একজন শ্রমিক। নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি। ঝুঁকিমুক্ত গোসলের স্থান নির্ধারণের দাবি স্থানীয়দের। সৈকতের নিরা নিরাপত্তাকর্মী দেওয়ার প্রশাসনের সঠিক নজরদারি বাড়ানো হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে বলে অভিমত তাঁদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে সাগর প্রতিনিয়ত তার আচরণ পাল্টায়। জোয়ারের সময় সাগরের যে স্থানে সমতল থাকে, ভাটার সময় সে স্থানে খাদের সৃষ্টি হয়। ফলে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হয়ে সেখানে চোরাবালির সৃষ্টি হয়। তাই সৈকতে গোসল করতে নামতে হবে নিরাপদ জায়গায়। নয়তো যেকোনো সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে। কিন্তু সমুদ্রসৈকতগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে এ ধরনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে পর্যটকদের অসতর্কতা ও অনিরাপদ সৈকতের কারণেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। অন্য দিকে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ঝরনাগুলো স্থান চিহ্নিত না করা, পাহাড়ি পথ গুলো দিক নিদের্শনা চিহ্নিত করা, এসব বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা।

সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) সাইদুল ইসলাম বলেন, অতিউৎসাহ ও অসতর্কতার কারণেই প্রাণ হারাচ্ছেন পর্যটকেরা। আমরা যে কোনো দুর্ঘটনার মোকাবিলার সবরকম সরঞ্জাম লোকবল রয়েছে। আমাদের উপজেলা ডুবুরি দল নেই। এই জাতীয় পরিস্থিতিতে আমরা বিভাগীয় স্টেশনে যোগাযোগ করি। অনেক সময় দেখা যায় কোন দূর্ঘটনা ঘটলে ডুবুরি দল না থাকার উদ্ধার কাজ করতে ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। সীতাকুন্ডে দুইটি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন রয়েছে, যদি ডুবুরি টিম নিয়োগ দেওয়া হয় তাহল উদ্ধার দ্রুত হবে।