Image description

বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন মোল্লার দুই দফা মারধরের দুইদিন পর ওবায়দুল হাওলাদার (৪০) নামে এক জেলে মারা গেছেন। বুধবার (১১ জুন) রাতে তিনি মারা যান। তবে এ ঘটনায় পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে চাইলেও পরিবার তাতে রাজি নয় এবং মরদেহ দাফনের অনুমতি চেয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুন বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ চলছিল। এ সময় তালিকায় নাম  থাকা সত্ত্বেও ওবায়দুলকে চাল না দেওয়ায় ইউপি সদস্য জসিম মোল্লার সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে জসিম মোল্লা ওবায়দুলকে মারধর করেন। পরে সচিব ইমরান মাস্টার রোল দেখে তাকে চাল দেন। এরপর ৯ জুন (সোমবার) নতুন বাজার এলাকায় আবারও ওবায়দুলকে মারধর করেন জসিম মোল্লা।

এ ঘটনায় ওবায়দুল তালতলী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের দুইদিন পর বুধবার রাতে তিনি নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে মারা যান।

তালতলী থানার ওসি মো. শাহজালাল বলেন, "জেলে ওবায়দুলকে ইউপি সদস্য মারধর করেছেন এবং বুধবার রাতে তিনি মারা যান। ময়না তদন্ত ছাড়া মরদেহ দাফন করা যাবে না। তবে পরিবার জেলা প্রশাসকের কাছে ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি মিললে দাফনের অনুমতি দেওয়া হবে, নইলে ময়নাতদন্ত করা হবে।"

এদিকে, মৃত ওবায়দুলের স্ত্রী মিলি বেগম বলেন, "আমার স্বামীকে দুই দফায় মারধর করেছেন ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা। এখন কীভাবে মারা গেছেন জানি না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই।"

ঘটনার পর সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) মো. তারিকুল ইসলাম মাসুদ ও তালতলী থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওবায়দুলের পরিবারকে টাকার প্রলোভন দেখাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হানিফ মিয়া ও নুর আলম মুন্সি জানান, ওবায়দুলের নাম মাস্টার রোলে থাকলেও তাকে চাল দেওয়া হয়নি এবং চালের জের ধরেই তিনি দুইবার মারধরের শিকার হন।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, "ওবায়দুল আমার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা বলত, তাই তাকে এক-দুইটা ধাক্কা ও চড় থাপ্পড় মেরেছি। তবে আমার মারধরে তিনি মারা যাননি, তিনি বাড়িতে স্ট্রোক করে মারা গেছেন।"

বড়বগী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মোল্লা এক জেলেকে চাল দেওয়া নিয়ে মারধর করেছেন এমন অভিযোগ তিনি শুনেছেন।

তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. একেএম মনিরুল ইসলাম জানান, আহত অবস্থায় ওবায়দুল হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. উম্মে সালমা বলেন, ইউপি সদস্যের মারধরে জেলে অসুস্থ হওয়ার কথা শুনেছেন এবং পরে মৃত্যুর ঘটনাও জেনেছেন।