
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলে আবু সালেকের জালে ধরা পড়েছে চারটি বিরল প্রজাতির মাছ, যা স্থানীয়ভাবে 'টিয়া মাছ' বা 'প্যারট ফিশ' নামে পরিচিত। বুধবার (১১ জুন) রাতে পায়রা বন্দরের শেষ বয়া এলাকায় মাছগুলো ধরা পড়ে এবং আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১১টার দিকে আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের খান ফিশ আড়তে নিয়ে আসা হয়।
গত ৪ জুন চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে 'এফবি আল্লাহর দোয়া- ৪' নামের একটি ট্রলারে ১৭ জন জেলে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে সাগরে গিয়েছিলেন। সমুদ্রে জাল ফেললে অন্যান্য মাছের সঙ্গে বিরল প্রজাতির এই চারটি মাছও ধরা পড়ে। মাছগুলোর মোট ওজন প্রায় ৫ কেজি। নিলামের মাধ্যমে ৫০০ টাকা কেজিদরে মাছগুলো ২৫০০ টাকায় কিনে নেন পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ।
জেলে আবু সালেক জানান, গতকাল রাত ১২টার দিকে সাগরে জাল ফেললে ইলিশ এবং পোয়াসহ অন্যান্য মাছের সঙ্গে এই টিয়া মাছগুলো ধরা পড়ে। এর আগে কখনো তাদের জালে এমন মাছ ধরা পড়েনি। মাছগুলো পোয়া মাছের সঙ্গেই নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাছটি Scaridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Scaridae Cetoscarus। স্থানীয়ভাবে এটি প্যারট ফিশ, টিয়া মাছ বা নীল তোতা নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এই মাছ বিরল হলেও ভারত মহাসাগরে এটি বেশি পাওয়া যায়। দক্ষিণ চীন সাগরের ফিলিপাইন উপকূল পর্যন্ত এর বিচরণ রয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, মাছগুলো বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় না। এটি Scarus Zuffer যা ধোফার প্যারোটফিশ নামেও পরিচিত। এই প্রজাতির মাছ পাথুরে আবরণ থেকে শেওলা খেতে অভ্যস্ত। শেওলার সঙ্গে ক্যালসিয়াম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করায় মাছটির আঁশ খুব মজবুত ও পুরু হয়। সাধারণত ১২ থেকে ২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হলেও কিছু ক্ষেত্রে এই মাছ ১.৩ মিটার বা ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। মাছগুলোর দেহে তোতা পাখির মতো নীল ছোপ ছোপ দাগ এবং লেজের মাঝখানের অংশ উজ্জ্বল সোনালি-হলুদ রঙের হয়।
নিলামে মাছগুলো কিনে নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ জানান, মাছগুলো বিক্রির জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যেই বরফ দিয়ে মাছগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং তিনি ভালো দামে বিক্রির আশা করছেন। মৎস্য ব্যবসায়ী ও খানফিস আড়তের স্বত্বাধিকারী রহিম খান বলেন, এ ধরনের মাছ সচরাচর পাওয়া যায় না। এর আগেও একবার তাদের আড়তে ছোট আকারের এমন মাছ এসেছিল। তিনি আরও জানান, মাছগুলো খেতে সুস্বাদু।
Comments