Image description

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানসহ ৪০০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের আগমুহূর্তে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার একাডেমীর ৩ নং গেটের সামনে পাকা রাস্তার উপর।
 
নিহতরা হলেন, নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার নারাচাতল গ্রামের মো. রোস্তম মিয়া (৪৬)। তিনি স্থানীয় একটি বাড়ির নিরপত্তাকর্মীর কাজ করতেন। অপরজন হলেন, বগুড়া সদর থানার কুটুরবাড়ী মধ্যপাড়া এলাকার মজনু প্রমানিকের ছেলে মাহফুজ (৩৫)। তিনি স্থানীয় কারখানার সুইং সেকশনে চাকুরী করতেন।
 
নেত্রকোণার রোস্তম মিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সকলের সম্পৃক্ততা ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন উল্লেখ করে তার স্ত্রী শেফাল বেগম কালিয়াকৈর থানায় মামলাটি করেন গত ২ জুন।

অপরদিকে পোশাক কারখানার শ্রমিক মাহফুজকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই আপেল মাহমুদ বাদি হয়ে গাজীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৩০ মে আবেদন করলে আদালতের বিচারক কালিয়াকৈর থানা পুলিশকে মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার আপেল মাহমুদ তার মামলায় উল্লেখ করেছেন, তার ভাই মো. মাহফুজ পরিবার নিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার বাড়ইপাড়া এলাকায় বসবাস করে একটি কারখানায় চাকুরি করতেন। অন্যান্য দিনের মতো গত বছরের ৫ আগষ্ট বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে কাজ থেকে বের হয়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ গ্রহন করে। বিভিন্ন শ্লোগন দিয়ে সফিপুর আনসার একাডেমির ৩ নং গেটের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌছালে মামলার আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে লাটি শোঠা দিয়ে এলোপাথারি মারধের ও গুলি করতে থাকে। পরবর্তীতে তার ভাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে মারা যায়।

ওই মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সরকার মোশারফ হোসেন, জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী। এতে ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামী করা হয়েছে।

অপরদিকে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার নারাচাতল এলাকার রোস্তম মিয়াকে হত্যার ঘটনায় বাদি শেফালী বেগম উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী কালিয়াকৈর উপজেলার আহাম্মনগর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে নিরাপত্তার কাজ করতেন। ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে মিছিল নিয়ে সফিপুর আনসার একাডেমীর সামনে পৌছালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার স্বামীকে এলোপাথারি মারধর ও গুলি করে হত্যা করে। ওই মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে সাবেক মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে। 

অন্য আসামীরা হলেন, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবীর, মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোশারফ হোসেন সিকদার, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, তার বড় ভাই সারোয়ার হোসেন, মৌচাক ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকুল ইসলমসহ ৩১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত অনেককে আসামী করা হয়েছে।

কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল হক জানান, দুইটি মামলায় আদালতের নির্দেশে দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে অন্যটিতে প্রধান আসামী করা হয়েছে আ ক ম মোজাম্মেলক হককে।