
ঈদুল আজহার বাকি মাত্র ৫ দিন। এমন সময় হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ-জারিয়া লোকাল ট্রেন। ট্রেনটি ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুর ও পূর্বধলা উপজেলা হয়ে জারিয়া পর্যন্ত চলাচল করে থাকে। গত (৩০ মে) শুক্রবার থেকে চারদিন ধরে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় এই রুটের চার ট্রিপের লোকাল ট্রেন চলাচল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য ইঞ্জিন সংকটই এই সিদ্ধান্তের কারণ।
তবে ভিন্ন সুর যাত্রী ও স্থানীয়দের কণ্ঠে। তাদের দাবি, ঈদের মতো বড় উৎসব সামনে রেখে এই সিদ্ধান্ত এক প্রকার অবহেলার পরিচায়ক। বিশেষ করে যেসব যাত্রীর বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা সীমিত বা ব্যয়বহুল, তাদের জন্য বিষয়টি হয়ে উঠেছে চরম দুর্ভোগের।
পূর্বধলা, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও ধোবাউড়া নেত্রকোনা জেলার এই উপজেলাগুলোর মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করতেন এই ট্রেনে। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, চিকিৎসা সেবাগ্রহীতা সব শ্রেণির মানুষের জন্য এটি ছিল সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
পূর্বধলার বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা যারা প্রতিদিন এই ট্রেনে যাতায়াত করি, হঠাৎ করে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। এই রুটে এমনিতেই বাসের সংকট রয়েছে, তার ওপর সিএনজির ভাড়া ঈদের সময় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিকল্প পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ আমাদের পক্ষে বহন করা খুবই কষ্টকর।”
শুধু যাত্রীই নয়, লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্টেশনসংলগ্ন ব্যবসায়ীরাও। পূর্বধলা, জারিয়া স্টেশনের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, “চারদিন ধরে স্টেশনে লোকই আসে না, বেচাবিক্রি একেবারেই নেই।”
এই পরিস্থিতিকে এক ‘দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত’ বলছেন পূর্বধলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ আলী জুয়েল। তাঁর মতে, “রেল কর্তৃপক্ষ প্রায়ই ইঞ্জিন সংকটের কথা বলে এই রুটের ট্রেন বন্ধ করে দেয়। এটা নিয়মিত ঘটছে, অথচ কোনো পূর্বঘোষণা থাকে না। এটা জনদুর্ভোগ বাড়ানোর নামান্তর।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, “ইঞ্জিন সংকটকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে সারাদেশে লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধের চেষ্টা চলছে। কারা এই সিদ্ধান্তে লাভবান হবে, তা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।”
জানতে চাইলে শ্যামগঞ্জ স্টেশন মাস্টার জহিরুল ইসলাম বলেন, “ইঞ্জিন সংকটের কারণে ট্রেনটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ইঞ্জিন পাওয়া মাত্র পুনরায় চালু করা হবে।” তবে ঈদের আগে ট্রেন চালু হবে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেলসেবা সম্প্রসারণ করা হলেও, ময়মনসিংহ-জারিয়া রুটে অব্যবস্থাপনা ও গুরুত্বহীনতার নজির মিলছে। স্থানীয়রা যখন আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি জানিয়ে আসছেন, হঠাৎ করে ঈদের আগ মুহুর্তে উল্টো লোকাল ট্রেনই বন্ধ হয়ে গেল। এ ঘটনাকে রেল খাতে ‘দক্ষতা ও দায়বোধের অভাব’ হিসেবেই দেখছেন তারা।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে ব্যাপকহারে ইঞ্জিন সংকটের কারণে চলমান অব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ইঞ্জিন সংকটের কারণে সকল আন্তঃনগর ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দুর্ঘটনায় কিছু ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, গরু পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন চালাতে হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ইঞ্জিন সংকট কাটিয়ে দ্রুত ট্রেন চলাচল পুনরায় চালুর চেষ্টা চলছে। তবে ঈদের আগে ট্রেন চালু হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
Comments