Image description

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটটি বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপজনিত প্রবল ঢেউয়ে উদ্বোধনের দুই মাসেই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেরিঘাট পর্যন্ত নবনির্মিত ৮০০ মিটার সড়কটি। ক্ষুব্ধ সন্দ্বীপগামী যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বর্ষা শুরুর আগেই মাত্র দুই মাস আগে উদ্বোধন হওয়া এমন ক্ষয়ক্ষতিতে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাট ও সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় তড়িঘড়ি করে, যার ফলে স্থাপনা গুলোর কাঠামো ছিল অত্যন্ত নাজুক ও টেকসইহীন। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের একদিনের আঘাতেই ফেরিঘাট এলাকা ও সড়কটি ভেঙে পড়েছে। সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের কারণে বঙ্গোপসাগরে ভেসে গেল।

অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল জলো”ছ্বাসে ঘাট ও সংলগ্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা জানিয়েছে, নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দ্র“ত মেরামতকাজ শুর“ হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা ফাওজুল কবির খান বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হওয়ার সাথে সাথে নিজ এলাকার ৪ লাখ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাট নির্মাণে নেওয়া হয় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প। 

চলতি বছরের ২৪ মার্চ ফেরিঘাটটি উদ্বোধন করেন, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফার“ক-ই-আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারসহ ৬ উপদেষ্টা। এর মাধ্যমে সদ্বীপগামী যাত্রাপথ সহজ ও আরামদায়ক হয়ে ওঠে, পাশাপাশি ঘাটটিকে ঘিরে গড়ে ওঠে পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমও। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকৃতি ও নিম্নমানের নির্মাণকাজের ধাক্কায় স্বপ্নভঙ্গ ঘটে হাজারো মানুষের।

সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপজনিত প্রবল ঢেউয়ে ব্লক গুলো সরে গিয়ে পুরো ফেরিঘাট এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে। ৮০০ মিটার সড়কের অধিকাংশ স্থানে ইট ও সুরকি উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও ব্লকের নিচের মাটি সরে গিয়ে বিশাল ফাঁকা গর্ত তৈরি হয়েছে, যেখানে ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিমুহূর্তে গর্তের বিস্তার বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেরিঘাট পর্যন্ত নবনির্মিত ৮০০ মিটার সড়ক। 

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সড়কের নির্মাণকাজ এখনো চলমান। এর মধ্যেই সৃষ্ট নিম্নচাপে ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৌশলীরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করছেন। তালিকা অনুযায়ী দ্রুত মেরামত করা হবে।’

উল্লেখ্য, বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটটি সদ্বীপের ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা দ্বীপের প্রায় চার লাখ মানুষের মূল যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। বাঁশবাড়িয়া ও সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাট পর্যন্ত ১৭ কি.মি. নৌপথ পারাপার। দ্বীপ উপজেলা এই বিপুল জনগোষ্ঠি জীবন বাজী রেখে নৌ পথে চলাচল করে। এর উন্নয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ও সন্দ্বীপবাসীদের মধ্যে যেমন স্বস্তি ফিরেছিল, তেমনি পর্যটন সম্ভাবনাও বাড়ছিল। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বল পরিকল্পনা ও নির্মাণ তদারকির অভাবেই আজ সেই স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।