
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া মডেল থানা ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় গত ৯ মাসের মধ্যে থানার ৯ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রদবদল করা হয়েছে। এ নিয়ে থানা দু'টির পুলিশ প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মাঝে সমালোচনা শুরু হয়েছে। বদলির ফলে বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় ওসির পদ শূন্য রয়েছে।
জানা যায়, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে’ গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থানা দুটির কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক ভাবে শুরু হওয়ার পর থেকেই ওসি পদে ঘন ঘন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ গত এক মাস আগে রাঙ্গুনিয়ার থানার নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেন মো. ওমর আলী। কিন্তু একমাসের মাথায় ওসি ওমর আলীর বিরুদ্ধে ‘হয়রানি ও বিভিন্ন অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে সর্বস্তরের জনসাধারণের’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অবশ্য ওসি ওমর আলী অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছিলেন। তবে, মানববন্ধনের পরদিনই ১৮ মে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ‘লাইন ও আর’ (লাইন অফিস রিজার্ভ) এ বদলি করা হয়। বদলির পর থেকেই রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসির পদ শূন্য হয়ে পড়ে।
বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন কবীর মৃধা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ওসির রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া-রাউজান সার্কেল) মো. নুরুল আমীন বলেন, 'এখনও (রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায়) কাউকে ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়নি। তবে নিয়ম অনুযায়ী থানার একজন উপ-পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন।'
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই অস্থিরতা শুরু হয় আগস্ট ২০২৪-এ থানা দুটির কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়ার পরপরই। ৮ সেপ্টেম্বর পূর্বের রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্ত্তীকে পিবিআইতে এবং দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মীর্জা মোহাম্মদ হাছানকে সিআইডিতে বদলি করা হয়। তাদের স্থলে মো. নজরুল ইসলামকে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় এবং মো. কামরুজ্জামানকে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। তবে এই নিয়োগও স্থায়ী হয়নি। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় ওসি নজরুল ইসলামের অল্পদিনের মধ্যে বদলি হলে সেখানে যোগ দেন আহসান হাবীব। ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর তাকেও বদলি করে মো. জাহেদুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়।
একইভাবে, রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় ওসি কামরুজ্জামানও অল্প কিছুদিন পর বদলি হলে তার স্থলে সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম যোগ দেন। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এই দুই ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম এবং মো. জাহেদুল ইসলামকেও একযোগে বদলি করা হয়। তাদের স্থলে মো. মোস্তফা কামাল খানকে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার এবং এটিএম সিফাতুল মাজদারকে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসির দায়িত্বে আনার আদেশ হয়। কিন্তু রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় মোস্তফা কামাল খানের যোগদানের এক সাপ্তাহের মাথায় পরিবর্তিত হলে পদটি পুনরায় শূন্য হয় এবং প্রায় দুই মাস থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হালদার ওসির অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
স্বল্প সময়ের ব্যবধানে থানার শীর্ষ পদে এতগুলো পরিবর্তন এবং বর্তমানে একজন উপ-পরিদর্শকের ওসির দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক সমন্বয় ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এদিকে চট্টগ্রামের এ দুই থানায় ঘন ঘন ওসিদের বদলি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপজেলার চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহারণ ও খুন বেড়ে যাওয়ায় কি উপজেলার এই দুই থানার ওসিদের বদলি করা হচ্ছে, নাকি পর্দার অন্তরালে কোন ঘটনা আছে তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।
Comments