নৌ বাহিনীতে চাকরির নামে প্রতারণা: দালাল চক্রের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

নৌবাহিনীতে চাকরি দেয়ার নামে মোটা অংকের চুক্তির অভিযোগে প্রতারক ও দালাল চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে নৌবাহিনী সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে চাকরিপ্রার্থদের স্বাক্ষরিত চেক বই, ফাঁকা স্টাম্প, মোবাইল ফোন, নৌ বাহিনীর নাবিক ও এমওডিসি পদের আবেদন পত্র এবং প্রশ্ন-উত্তর-পত্রের সেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সোনাডাঙ্গা থানা চত্বরে প্রেস ব্রিফিং করেন নৌবাহিনীর খুলনা কন্টিনজেন্ট।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- দালাল চক্রের প্রধান শামীম ইসলাম (৪০), তার সহযোগী আশিকুর রহমান (২১), শাকিল আহমেদ (২০), মোঃ আলহাজ্ব আলী (১৯), মোঃ নয়ন আলী (১৯), মোঃ মুস্তাকিম (১৯), ফরহাদ মন্ডল (২১), মোহাম্মদ রিয়াজ ইসলাম (১৯) ও মোঃ আমিরুল ইসলাম (১৯)।
নৌবাহিনী খুলনার মিডিয়া সেলের সূত্র জানান, উল্লিখিত দালাল চক্রের সদস্যরা নৌবাহিনীতে নাবিক এবং এমওডিসি পদেনিয়োগ দেয়ার কথা বলে ৩৮ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে চেক এবং ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তারা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন হাফিজনগর এলাকার 'সুইট প্যালেস' নামক একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি প্রার্থীদের জড়ো করে প্রশিক্ষণের নামে চুক্তিপত্র সম্পাদনের কাজ করছিল। জনপ্রতি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে তারা ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। গোপন খবরের ভিত্তিতে এ তথ্য পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল সোমবার মধ্য রাতে ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। সকালে তাদের সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় হস্তান্তর পূর্বক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিং এ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সামিউর রহমান খান বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে স্বাক্ষরিত ব্যাংকের ব্ল্যাংক চেক, ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প এবং হোটেলে নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন রেখে দেয়। এছাড়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য হোটেলেই প্রার্থীদের চোখ পরীক্ষার জন্য কালার ব্লাইন্ড টেস্ট বুক এবং ভুয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, প্রতি বছর কার্যক্রম চলাকালে এ ধরনের প্রতারক অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে নৌবাহিনীতে চাকরি প্রার্থীদের সাথে প্রতারণার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু নৌ বাহিনী সদস্যদের তীক্ষ্ণ নজরদারি, ভর্তি কার্যক্রমের সুব্যবস্থাপনা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এ ধরনের অবৈধ প্রচেষ্টা কার্যক্রম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করেন, নৌবাহিনীতে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগের কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের অনেকেই বসতভিটা, আবাদি জমি ও জমানো অলংকার সহ শেষ সম্বল বিক্রি করে টাকা প্রদান করে। বিষয়টি বুঝতে না পেরে তারা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।
Comments