Image description

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভা সদরে একটি সাততলা ভবনের ওপরের অংশ ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ভবনে হেলে পড়েছে। বাসিন্দারা বলেছেন, কিছুদিন আগে দুটি ভবনের মাঝে এক হাতের মতো ফাঁকা ছিল। কিন্তু এখন সাততলা ভবনটি পার্শ্ববর্তী ভবনের গায়ে হেলে পড়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের বিপরীতে ১০০ গজ সামনেই বিএস ৭৮৫৫ নম্বর দাগের ওপর হেলে পড়া ভবনটি নির্মিত। পৌরসভার বাসিন্দা মো. আবদুল খালেক ৩১ শতক নাল জমিতে নির্মাণ করেছেন সাততলা ভবনটি। স্থানীয়দের দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটির নকশা এখনও বাতিল করছেন না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে বড় ধরণের দুর্ঘটনা হতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুল খালেক ২০১৯ সালে ফটিকছড়ি পৌরসভা থেকে ছয়তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে সাততলা ভবনটি নির্মাণ করেন। কিন্তু অনুমোদন ছাড়া এক তলা অতিরিক্ত নির্মাণ করলেও পৌর কর্তৃপক্ষ এতে বাধা দেয়নি। নির্মাণের পর থেকে ওই বাড়িটি ভাড়া দিয়ে আসছেন তিনি।

নির্মাণের প্রথম দিকে ভবনটি ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি হেলে পড়ে। ওই সময় এলাকাবাসী মৌখিকভাবে এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। অভিযোগ করার পর কর্তৃপক্ষ ভবন মালিককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তাগাদা দেন। কিন্তু অজানা কারণে তা বেশিদিন এগোয়নি। ফলে ভবনটি ঝুঁকিযুক্ত হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটিতে মালিকসহ ২১ পরিবার বাস করেন। পাশের ভবনের উপর ভর করেছে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি। খালি চোখে বিষয়টি অনেকে দেখলেও কর্তৃপক্ষ কিছুতেই দেখেন না।

ভবনটির মালিক মো. আবদুল খালেক প্রবাসে থাকেন। চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ভবনটির তত্ত্বাবধান করেন খালেকের স্বজন মো. নেজাম উদ্দিন বুলবুল। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বহু সাংবাদিক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। আপনি কে? আপনাকে এসব বিষয় বলব কেন?’ পরে তিনি বলেন, ‘ভবনটি করার আগে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়েছেন। প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে ভবন নির্মাণ হয়েছে।’

ফটিকছড়ি পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রাজীব বড়ুয়া বলেন, ‘ভবনটির ছয়তলার অনুমোদন আছে। পরে অন্যায়ভাবে তিনি সাততলা করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ সনদ দিতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) প্রকৌশলী সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘ভবন হেলে পড়া মানেই ত্রুটি-বিচ্যুতির অংশ। এর দায় কেউ এড়াতে পারেন না। আশা করি স্থানীয় প্রশাসন দেখে ব্যবস্থা নেবেন।’   

ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘জেনেছি ভবনটি কিঞ্চিৎ হেলে পড়েছে। যেহেতু এখনও কোনো স্ট্রাকচারাল ক্ষতি হয়নি, তাই বাসিন্দারা এখনো আছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পেলে বিষয়টি দেখা হবে। তবে বিষয়টি পুরোই ইউএনওর এখতিয়ার।’

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ঠিক কী কারণে ভবনটি হেলেছে, সে বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। ভবনের বাসিন্দাদের কেউ বলছেন, আগে থেকেই খানিকটা হেলে ছিল। কেউ বলছেন ইদানিং এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’