
টাঙ্গাইল জেলার শ্রেষ্ঠ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পুরস্কার পাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় মো. মোশারফ হোসেনকে মির্জাপুর থানা থেকে আকস্মিকভাবে বদলি করা হয়েছে। গত ৪ মে এই বদলির আদেশ জারি হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে "অযৌক্তিক", "প্রশাসনিক চাপ" অথবা অন্য কোনো "ইশারা" হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্টের পর টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি যখন সংকটের মুখে, তখন ২ সেপ্টেম্বর মো. মোশারফ হোসেন মির্জাপুর থানার ওসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও মানবিকতার সাথে কাজ করে মির্জাপুরের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি এবং পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ গত ২৩ এপ্রিল পুলিশ সুপারের হাত থেকে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি’র পদক লাভ করেন।
তবে এই সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই তার বদলির খবরে স্থানীয় ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং এমনকি জেলা পুলিশ অফিসের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যেও আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন যোগ্য ও সাহসী কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ায় জনসেবার ক্ষেত্রে একটি বড় আঘাত হানা হয়েছে। অনেকের ধারণা, ওসির জনপ্রিয়তা কারো কারো জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে আসা মন্তব্যগুলোতে ওসি মোশারফ হোসেনের কর্মদক্ষতা এবং সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার স্পষ্ট চিত্র দেখা যায়। একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, "একজন সৎ, সাহসী, এবং মানুষের কাছে প্রিয় পুলিশ অফিসার যখন হঠাৎ করে বদলি হন, তখন প্রশ্ন উঠে কেন। ওসি মোশারফ ছিলেন আমাদের জেলার গর্ব।"
পাকুল্লা বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ওসি মোশারফকে রাতে জেগে ডিউটি করতে দেখেছেন এবং তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। মির্জাপুর বাইপাস ও গোড়াই এলাকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা জানান, তার সময়ে কোনো চাঁদাবাজি ছিল না। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলেন, মোশারফ হোসেনের সময়ে তারা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছেন এবং তিনি নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।
বাঁশতৈল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সম্প্রতি তাদের এলাকায় একটি বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং ওসি মোশারফ দ্রুততম সময়ে ডাকাতদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সাফল্যের জন্য তিনি পুরষ্কারও পেয়েছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইমন সিদ্দিকীসহ অনেকে বলেন, মির্জাপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন খারাপ ছিল, তখন ওসি মোশারফ অত্যন্ত আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন এবং স্থানীয়দের সাথে নিয়মিত আলোচনা করতেন।
এদিকে, পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সদ্য পদায়িত নতুন ওসি রাশেদুল ইসলামের বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়িতে এবং তার শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। তার শ্বশুর স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা এবং তিনিই এই বদলির কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্য একটি সূত্র ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে এই বদলি হওয়ার গুঞ্জন শোনালেও এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কয়েকজন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যক্তিগত আলাপকালে এই ঘটনায় মর্মাহত বলে জানিয়েছেন। ওসি মোশারফের বদলিতে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা বলেন, মোশারফ একজন পরিশ্রমী, আন্তরিক ও মানবিক অফিসার ছিলেন এবং এত দ্রুত তার বদলি হওয়া দুঃখজনক।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বদলি পুলিশের চাকরির একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Comments