Image description

ময়মনসিংহের ত্রিশালে চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটার উৎসব চললেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসল ঘরে তোলার ব্যস্ততা থাকলেও, শ্রমিকের উচ্চ মজুরি ও বাজারে ধানের কম দামে হতাশ তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলার ধানীখোলা, বৈলর, মোক্ষপুর, সাখুয়া, হরিরামপুর, ত্রিশাল, বালিপাড়া, আমিরাবাড়ী, মঠবাড়ী ও ত্রিশাল পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে ধান কাটার কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে নতুন ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিশ্রমের পরেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বর্তমানে একজন ধান কাটার শ্রমিকের দৈনিক মজুরি এক হাজার টাকারও বেশি। বৃষ্টি হলে এই মজুরি আরও বেড়ে যায়। এছাড়া চারা রোপণ, কীটনাশক, সার ও সেচ বাবদও তাদের মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। ধানের আশানুরূপ দাম না পেলে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। অনেকে ধারদেনা করে চাষাবাদ করেছেন, ফসল কাটার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ঋণ পরিশোধের তাগিদে কম দামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে নতুন ধান প্রতি মণ ৯০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় ৪-৫০০ টাকা কম।

হরিরামপুর ইউনিয়নের কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, "এ বছর জমিতে ভালো ধান হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকের দাম অনেক বেশি, আর ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। সার, কীটনাশক, সেচ দিতে যা খরচ হয়েছে, তাতে লাভ হবে কিনা সন্দেহ।" 

ত্রিশাল পৌরসভার নওধার এলাকার কৃষক নজরুল ইসলামও একই সুরে বলেন, "বোরো জমিতে সেচ ও শ্রমিকের খরচ অনেক বেশি। সেই তুলনায় লাভের আশা খুবই কম।"

ত্রিশাল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান জানান, চলতি মৌসুমে ত্রিশালে প্রায় বিশ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে এবং কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ধানের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ১৪৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তিনি কৃষকদের উদ্দেশে পরামর্শ দেন, কাঁচা ধান ভালোভাবে শুকিয়ে বিক্রি করলে তারা ভালো দাম পাবেন।