Image description

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া গ্রামের মানুষের ভাগ্যে জোটেনি একটিও ডিপ টিউবওয়েল। ফলে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন গ্রামবাসী। খাবার পানি, ধোয়া-মোছা ও গোসলের জন্য তাদের একমাত্র ভরসা প্রাকৃতিক পাহাড়ি ঝর্ণা, ছড়া এবং টিলার নিচে গর্ত করে জমিয়ে রাখা পানি।

বর্ষাকালে কিছুটা স্বস্তি মিললেও শুষ্ক মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে) চিত্র পাল্টে যায়। অধিকাংশ ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নোয়াপাড়াবাসীকে বাধ্য হয়ে পাহাড়ি ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি অথবা টিলার নিচে তৈরি অগভীর গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। অগভীর কুয়ায় চুঁইয়ে চুঁইয়ে আসা সামান্য পানি বাটিতে করে তুলে ছেঁকে কলসি ভরতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের। প্রতিদিন পানি সংগ্রহের এই সংগ্রাম যেন নোয়াপাড়ার মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।

বিশুদ্ধ পানির অভাবে চরম দুর্ভোগের শিকার নুচিং মারমা (৪৫) বলেন, প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট দুর্গম পাহাড়ি পথ হেঁটে মৃত ছড়াটির খোঁড়া ছোট একটি গর্তের কাছে যেতে হয় পানির জন্য। গর্ত থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বের হওয়া সামান্য পানি বাটিতে তুলে একটু একটু করে কলসি ভরে নিজের কাঁধে চাপিয়ে বাড়ি ফিরি। 

নুচিং মারমা আরও বলেনা,  শীতকাল শুরু হতেই পাহাড়ে পানির অভাব দেখা দেয়, যা বর্ষা না আসা পর্যন্ত (ডিসেম্বর থেকে মে মাস) অব্যাহত থাকে। এই কষ্ট যেন ৫৪ বছর ধরে আমাদের নিত্যসঙ্গী।

নোয়াপাড়া এলাকার কারবারি (গ্রামপ্রধান) সাজাই মারমা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অংথোয়াই মারমা এবং অন্যান্য বাসিন্দারা জানান, নিজেদের উদ্যোগে টাকা খরচ করে রিং টিউবওয়েল এবং কুয়ো স্থাপন করা হলেও পানিতে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থাকায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী। এই দূষিত পানি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

নোয়াপাড়ার বাসিন্দা সাথোয়াই মারমা আরও জানান, একসময় নালা-নর্দমা ও ছড়ার ময়লাযুক্ত পানি কাপড়ে ছেঁকে পান করতেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগও নেই, কারণ ছড়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চিরনজিৎ তনচংগ্যা জানান, ইউনিয়নের জন্য মাত্র ৫টি টিউবওয়েল বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পরিশোধনপূর্বক পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণের বিনীত আহ্বান।

এদিকে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কাপ্তাইয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ্র বর্মণ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে কাপ্তাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। সেই অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কাজ করে থাকে।