কুমিল্লায় আধিপত্য নিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক আহত

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের আশিরপাড় বাজারে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টায় আশিরপাড় ও খানাতুয়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় হামলাকারীরা স্থানীয় বাজারের প্রায় ১২টি দোকানে ভাঙচুর চালায়।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে তারা। আহতদের উদ্ধার করে মনোহরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পার্শ্ববর্তী লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং আরও দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
আহতদের মধ্যে আশিরপাড় গ্রামের শাহ আলমের ছেলে আরাফাত (২৫), আবুল কাশেমের ছেলে ফল ব্যবসায়ী আরাফাত হোসেন (২২), মাস্টার আবুল কালাম আজাদের ছেলে মোরশেদ আলম মানিক (৩৮), আবদুল মুনাফের ছেলে সায়েদ (৪৫), আজিমের ছেলে আনোয়ার (৩৩), মৃত নরুল হুদার ছেলে রাকিব (২৮), আবদুল সোবহানের ছেলে পারভেজ (৩২), মোরশেদ আলম মানিকের ছেলে সিয়াম (১২) এবং খানাতুয়া গ্রামের জাকির হোসেন ছেলে সামছুল হক (৫০), আবুল কালাম (৪৫), শাফু মিয়ার ছেলে ফয়সাল (২১), নজির (৩০), সাত্তার ও সিদ্দিকসহ অন্তত আরও ছয়জন রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আশিরপাড় বাজার পরিচালনা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আশিরপাড় গ্রাম এবং খানাতুয়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত ৫ আগস্ট স্থানীয় বাজারে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খানাতুয়া গ্রামের কয়েকজন যুবক আশিরপাড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী আরাফাতের (২২) উপর হামলা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী হুমায়ুন জানান, রাত ৭টার দিকে কয়েকজন যুবক ফল ব্যবসায়ী আরাফাতের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করতে শুরু করেন। এরপরই উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
আশিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ আলম মানিক অভিযোগ করেন, খানাতুয়া গ্রামের শামিম, ফয়সাল, হৃদয়, শাহাবুদ্দিন ও মহিনসহ কয়েকজন তার ভাতিজা আরাফাতকে মারধর করছিল। বাধা দিতে গেলে তারা তাকে, তার ভাতিজা ও সন্তানকে কুপিয়ে জখম করে। তাদের হামলায় ১৫-২০ জন আহত হন এবং ১০-১৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
অন্যদিকে, খানাতুয়া গ্রামের নুর মোহাম্মদ দাবি করেন, আশিরপাড় গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে বাজারটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং বাজারের খাস জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। তারা বাজারের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অজুহাতে জিম্মি করে টাকা আদায় করে। এর প্রতিবাদ করলে আশিরপাড় গ্রামের লোকজন তাদের উপর হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, বাজারে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী খানাতুয়া গ্রামের এবং মঙ্গলবার আশিরপাড় গ্রামের লোকজন অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের প্রায় ১০ জনকে আহত করে ও ১০টি দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট চালায়।
মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপুল চন্দ্র দে বুধবার বিকেলে জানান, আশিরপাড় বাজারে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments