
পটুয়াখালীর বাউফলে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। গত দুই মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার গবাদি পশু এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে মারা গেছে ১২৫টি গরু, যার অধিকাংশই বাছুর। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে।
উপজেলার বড় ডালিমা গ্রামের কৃষক মো. মনির হোসেন জানান, তার একটি গাভীর বাছুর লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "কৃষি কাজের পাশাপাশি দুইটি গরু লালনপালন করে আসছি। ভাইরাস রোগ হয়ে বাছুরটি মারা যায়। সরকারি পশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে কোনো রকম সহযোগিতা পাইনি। তাদের চিকিৎসা সহযোগিতা ও ভ্যাকসিন পেলে হয়তো আমার গরুর বাছুরটি মারা যেত না।"
একই অভিযোগ পূর্ব কালাইয়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলামেরও। লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে তারও একটি বাছুর মারা গেছে। তিনি বলেন, "সরকারি পশু চিকিৎসকরা আমাদের কৃষকদের কোনো খোঁজ খবর রাখে না। যে কারণে বাধ্য হয়ে গ্রাম্য চিকিৎসকদের দ্বারস্ত হতে হয়। এতে ভুল চিকিৎসায় আমাদের গরু মারা যাচ্ছে।"
পশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মশা মাছির মাধ্যমে দ্রুত ছড়াচ্ছে এই রোগ। আক্রান্ত পশুর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, শরীরে ফোসকা, পা ফুলে যাওয়া এবং মুখ দিয়ে লালা পড়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেক পশু মারা যায়।
ধানদী এলাকার খামারি মো. নিজাম উদ্দিন জানান, তার খামারের একটি তিন বছর বয়সী বাছুর লাম্পি রোগে আক্রান্ত। তিনি অভিযোগ করেন, "আমার খামারের বয়স প্রায় ৩ বছর। তবে কখনো কোনো সরকারি পশু চিকিৎসক ও প্রাণিসম্পদ অফিসের কেউ আমার খামারের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি এবং কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি।"
চর কালাইয়া গ্রামের কৃষক নেছার, আলাউদ্দিন এবং বড় ডালিমা গ্রামের জয়নাল আবেদিনের গরুও লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত। তারাও সরকারি চিকিৎসকদের সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন এবং বাধ্য হয়ে স্থানীয় ফার্মেসি ও গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তবে, উপজেলা পশু হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আবু রায়হান দাবি করেন, পশু হাসপাতাল কৃষক ও খামারিদের জন্য সবসময় উন্মুক্ত। সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, "লাম্পি স্কিন রোগে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসা পেলে আক্রান্ত পশু সুস্থ হয়ে উঠে। তবে ভুল চিকিৎসার জন্য অধিকাংশ গরু মারা যাচ্ছে।" তিনি খামারিদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এমনকি হাসপাতালে আসতে অসুবিধা হলে ফোনেও পরামর্শ দেওয়ার কথা জানান।
Comments