
নড়াইলের কালিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষের ঘটনার পর অব্যাহত রয়েছে বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট। এছাড়া মাইকিং করে হুমকি দিয়ে রাতে কেটে নেওয়া হচ্ছে একাধিক পরিবারের পাকা জমির ধান। কালিয়া উপজেলার বাবলা হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
গত ১১ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ফরিদ মোল্যা (৫৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর থেকেই পুরুষশূন্য এ গ্রামে নারীদেরও ধান কাটতে বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে না পারলে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
নিজেদের জমির ধান কাটতে না পারায় কান্নায় ভেঙে পড়েন জোৎস্না বেগম। তিনি জানান, দিন-দুপুরে এলাকায় মাইকিং করে হুমকি দেওয়া হলো—মিলন মোল্যার দলের কেউ ধান কাটতে গেলে দেখে নেওয়া হবে। আমরা ভয়ে মাঠে যাইনি। কিন্তু ওই রাতেই দেখি, আমাদের ক্ষেতের পাকা ধান গায়েব! কে বা কারা সব কেটে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কদিন আগেই আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে লুটপাট চালানো হয়েছিল। প্রাণভয়ে আমরা আশ্রয় নিয়েছি অন্য গ্রামে। সেখানেও ঠিকমতো খাওয়া-ঘুম নেই। গতকাল রাতে আবার শুনি, পিকুল শেখ আর রিকাইল শেখের লোকজন এসে বসতঘর, রান্নাঘর সব কিছু ভেঙে শেষ করে দিয়ে গেছে। আমাদের আর কিছুই রইল না। সব শেষ।’
স্থানীয়রা জানান, ইছহাক শেখের দুই ছেলে, আজিবর শেখ ও মুজিবর শেখের প্রায় ৫০ শতক জমির ধান কেটে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হুমায়ুন শেখের ৩০ শতক জমির ধানও বাদ পড়েনি। বর্তমানে গ্রামটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায়, চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই গ্রামের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। রাতের অন্ধকারে বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে এবং লুট করা হচ্ছে ঘরের আসবাবপত্রসহ জালনা দরজার লোহার গেট।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পিকুল শেখ মোবাইল ফোনে বলেন, আমি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হওয়ায় আমাদের দলীয় লোকদের আমি বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ফাঁসাতে এমন অপপ্রচার করেছেন তারা।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ধান কাটা বা ঘর ভাঙচুর বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে কালিয়া উপজেলার বাবরা-হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ফরিদ মোল্যা (৫৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। হত্যা পর প্রতিপক্ষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযানে সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় উভয়পক্ষের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে।
Comments