Image description

ফরিদপুর সদরের কানাইপুরে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে ৪ সদস্যের একটি পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মাগরিবের নামাজ বাদ পারিবারিক কবরস্থানে চারজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।

নিহত পরিবারের সদস্যরা হলেন, রাকিবুল হাসান মোল্লা ওরফে মিলন (৩৫), তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার ওরফে সুমি (২৩) এবং তাঁদের দুই ছেলে আলবি রোহান (৬) ও আবু জিসান (৩)। মিলন ঢাকায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে লিফটম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে মিলন ছিল মেজো। মিলনের শ্বশুর বাড়ি পাশের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের উথলী-আড়পাড়া গ্রামে।

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাকিবুল হাসান মিলন (৫০) ঈদের ছুটি শেষে সোমবার ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিয়ে বিকেলে আবার বাড়িতে আসেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও মাকে নিয়ে আলফাডাঙ্গা থেকে পিকআপ ভ্যানে ঢেউটিন আনতে ফরিদপুরে যাচ্ছিলেন। সাথে আরো আত্মীয়স্বজন এবং আশপাশের গ্রামের কয়েকজন ছিলেন। চাকরির সুবাদে পরিচিতদের মাধ্যমে সম্প্রতি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার কয়েকটি পরিবারের জন্য কয়েক বান্ডিল ঢেউটিন সহায়তার বরাদ্দ আনেন। 

পিকআপভ্যানটি ফরিদপুর শহরের কানাইপুরের দিগনগরে এ্যাবলুম রেস্টুরেন্ট এলাকায় ঢাকা-মাগুরা গামী ইউনিক পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জনসহ ঘটনাস্থলে ১১ জন মারা যান। পরবর্তীতে আরো ৩জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত হয় পিকআপের ১৪ জন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিহতের পরিবারের স্বজনরা লাশ নিয়ে দুপুরের দিকে স্ব স্ব এলাকায় পৌচ্ছান। এ ঘটনায় হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান এমপি ও ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।

এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন রাকিবুলের মা হুবাইয়া বেগম (৬০)। তিনি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। আজ বেলা একটার দিকে মিলন ও তাঁর এক ছেলের লাশ প্রথমে বাড়িতে ছত্রকান্দা গ্রামে নিয়ে আসা হয়। মিলনের খালা ওই গ্রামেই বাড়ি হাসিনা বেগম বলেন, সকাল ৭টার দিকে মিলন একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হন। পথে কানাইপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সপরিবার নিহত হন তিনি। এই পিকআপ ভ্যানের চালক ছিলেন আলফাডাঙ্গার কুসুমদী গ্রামের মো. নজরুল (৩২)। তিনিও দুর্ঘটনায় নিহত হন।

বেলা দেড়টার দিকে শামীমা আক্তার ওরফে সুমি (২৩) ও আরেক সন্তানের লাশ বাড়িতে আনা হয়। লাশ আনার সাথে সাথেই পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে ছত্রকান্দা গ্রাম। মিলনের অপর খালা ৮৫ বছরের বৃদ্ধা পরি বেগম চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। রাকিবুলের বাবা তারা মোল্লা ঘরের সিড়িতে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘কেমনে এ শোক সইবো আমি’ বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ নিতে হবে।, আবার সেই সন্তানের দুই ছেলে ও স্ত্রীকে আল্লাহ নিয়ে গেল! আমার মিলনের ঘরে বাতি জ্বালানোর আর কেউ রইল না। আমার স্ত্রী হুরিও মৃত্যু শর্য্যায়।

মিলনের দুই সন্তানের খালা (শালিকা) বন্যা আক্তার দুলা ভাইয়ের ঘরের সামনে সিড়িতে আছড়া আছড়ি করে কাঁদছিলেন। এ সময় অন্য লোকজন তাকে নিহত দুলা ভাই মিলনের ঘরে নিতে চাইলে, ‘বন্যা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি ওই ঘরে আর যাবো না’। দুলা ভাইকে খবর দিলে বাড়ি চলে আসতো। ‘ওরে আল্লাহ এক্সিডেন্টের খবর শুনে তোমার কাছে দুলা ভাই, আপা ও ভাগনেদের ভিক্ষা চাইলাম তাও দিলে না’। আপার ঘরে থাকার মত কেউ বেঁচে নাইরে, কেমনে শর্য্য করবো এ যন্ত্রনা।’ তিনি আরো বলেন, আমাদের তিন বোনের কোন ভাই নাই, সেজন্য এক ভাগনেকে বাড়িতে রাখতে চেয়েছিলাম; তাও হলো না।

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি