Image description

বরিশালে কাক্সিক্ষত ভোট উৎসব শুরু হচ্ছে আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে। রোববারই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় বরিশাল নগরীকে।

এরই মধ্যে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের চেয়েও বরিশাল ও খুলনা সিটিতে ভালো ভোট হবে। নির্বাচনে কেউ অনিয়ম করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসি।

আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ। এর আগেই গতকাল রোববার সকালে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনি সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেওয়া হয়। 
বরিশাল সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমবারের মতো এবার বরিশালের সবগুলো কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।

ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রতিটি ওয়ার্ডে একটানা ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে ভোটারদের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ব্যাপক সাড়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের বেশি থেকেও প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে আমাদের। আশা করছি কেন্দ্রে ভোটার সমাগম ঘটবে এবং সুষ্ঠু পরিবেশে তারা ভোটে দেবেন। তিনি বলেন, ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথের জন্য দেড় হাজার ইভিএম রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ইভিএমসহ নির্বাচনি সামগ্রী প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১২৬টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

বরিশালে কঠোর নিরাপত্তা প্রস্তুতি : রোববার সকাল থেকে বরিশাল নগরের প্রতিটি মোড়ে টহল পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। এ ছাড়া রহমতপুর, নতুল্লাবাদ বাসটার্মিনাল, রূপাতলিসহ শহরের মূল প্রবেশদ্বারগুলোতে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করতে দেখা যায়। নগরজুড়ে বিজিবির টহল দেখা গেছে। বহিরাগতদের নগরী ছাড়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল প্রশাসন। 

বরিশাল মহানগর পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গোটা নির্বাচনি এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৪ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার সদস্য মিলিয়ে ১ হাজার ৫১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে বলে জানানো হয়েছে। র‌্যাবের ১৬টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। ১০ প্লাটুন বিজিবি, ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

মেয়রপ্রার্থীরা যেসব কেন্দ্রে ভোট দেবেন: বরিশাল সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮। এই সিটিতে ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জন। ভোটের শুরুতেই প্রার্থীরা সবাই নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত নগরীর কালিবাড়িরোডস্থ সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গোরস্থান রোডের সৈয়দ আবদুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিং আ. রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী মো. মিজানুর রহমান বাচ্চু ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন। টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী কামরুল আহসান রূপণ কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, হরিণ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী মো. আলী হোসেন হাওলাদার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর ইস্কান্দার শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান বরিশাল নগরীর সদর রোডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ: ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার নীলনকশা করেছে বলে অভিযোগ তোলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস। রোববার সকাল ১০টায় নগরের অক্সফোর্ড মিশন রোডে তার প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরিশালে এসে বলেছিলেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে, কিন্তু এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও হয়নি। এখানে প্রশাসন তাদের নিরপেক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ওনারা বলেছিলেন নির্বাচনের দিন বরিশালে কোনো বহিরাগত থাকবে না, কিন্তু আমরা বার বার বলেছি বরিশাল বহিরাগততে ভরে গেছে। ওনারা বলেছিলেন ১১ জুন থেকে বরিশালে বহিরাগত থাকবে না, কিন্তু বাস্তবে দেখেছি নগরের সব হোটেল-মোটেলে রেস্তোরাঁগুলোতে এখনও বহিরাগতরা অবস্থান করছে। সব আচরণবিধি ক্ষমতাসীনরা লঙ্ঘন করছে, গত রাতে আমরা তাদের মিছিল করতে দেখেছি। তারা বিশেষ প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক গেঞ্জিতে প্রিন্ট করে তা পরে মিছিল করেছে। এগুলো দেখার মানুষ নেই। সাদা পোশাকধারীরা আমাদের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, আমরা এখন শঙ্কিত হয়ে গেছি। আমাদের ভোটারদের কোনো অভিযোগই নির্বাচন কমিশন আমলে নিচ্ছে না। আমরা কয়েকটি অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু একটি অভিযোগের উত্তরও নির্বাচন কমিশন আমাদের দেয়নি। আজ এ প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। 

এদিকে রোববার দুপুর দেড়টায় নগরীর সদর রোডস্থ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে। বিএনপির সমর্থকরাও মনে করছে আমাকে ভোট দিতে পারলে নগরবাসী সেবা পাবে। বিজয়ী হলে বরিশালের উন্নয়ন করার নিশ্চয়তা আমি দিয়েছি। এ সময় নির্বাচনের পরিবেশ ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকতেই পারে, করতেই পারে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সবকিছু স্বাভাবিক ও চমৎকার পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। এখানে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাচ্ছি না। অভিযোগ যে কেউ করতে পারে। কোনো বিষয়ে আমি পাল্টা জবাবও দিতে চাই না। তবে আমি বলব, নির্বাচনের পরিবেশটা ভালো আছে। ইনশাআল্লাহ এখানে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। 

গাজীপুরের চেয়েও বরিশাল ও খুলনা সিটিতে ভালো ভোট হবে : রোববার নির্বাচন কমিশার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান গণমাধ্যমকে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের চেয়েও বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোট ভালো হবে। নির্বাচনে কেউ কোনো অনিয়ম করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনে বিধি-বিধান প্রতিপালনে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা সুতীক্ষ্ণ নজর রাখছি। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোটের দিনও আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব।
আহসান হাবিব আরও জানান, নির্বঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দেশনা প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা শতভাগ পালনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আমাদের বার্তা স্পষ্ট ছিল, আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি এবং নির্বাচন প্রচারণায় অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা করলে কোনো ধরনের ছাড় দিইনি। নির্বাচনি এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের জন্য চেকপোস্ট করা হয়েছে।