Image description

বন্দুকের ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে চলেছে যৌন নির্যাতন, দলবেঁধে করা হয়েছে ধর্ষণ আরও কত বর্বর নির্যাতন। মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের হাতে স্বামী কিংবা স্বজনকে হত্যার দৃশ্য অথবা লাগিয়ে দেওয়া আগুনে চোখের সামনে নিজের গ্রামকে ধ্বংস হতে দেখা ভয়াবহ সব ঘটনার সাক্ষী তারা।
 
কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রিত ৭ রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ আর্জেন্টিনার একটি আদালতে সশরীরে এমন নির্মম অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য দিতে দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে যাচ্ছেন। তারা সবাই উখিয়া ১৩ নং ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গা। 
 
২৮ মে বিকালে তারা ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ছেড়েছেন। একই দিন রাতে তারা আর্জেন্টিনার উদ্দেশে রওয়ানা করবেন বলে জানা গেছে।
২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর ‘ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন’ (সর্বজনীন এখতিয়ার) নীতির অধীনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা একটি মামলার তদন্ত শুরু করে আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগ।
 
মামলাটির প্রেক্ষিতে সে সময় ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বাস করা ৭ রোহিঙ্গা, যাদের চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বুয়েন্স আয়ার্সের আদালতে সাক্ষী হিসেবে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
 
এই মামলা ছাড়াও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিজে) এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিসি) বিচার চলছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে (ব্রুক), ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আর্জেন্টিনায় মামলাটি শুরুর আবেদন করেছিল।
 
আইসিসির তৎকালীন তদন্তের কারণে দেশটির নিম্ন আদালত ২০২১ সালের ১২ জুলাই মামলাটি খারিজ করে। পরে আগস্টে ব্রুকের করা আপিলের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে বাতিল করার রায় দিয়ে ওই বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় আর্জেন্টিনার ফেডারেল ক্রিমিনাল কোর্টের (ফৌজদারি আদালত) সেকেন্ড চেম্বার। মামলাটির প্রক্রিয়াকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ উল্লেখ করে ব্রুকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বার্তায় বলা হয়, আর্জেন্টিনার মামলাটি বিশ্বের কোথাও রোহিঙ্গা গণহত্যা-সংক্রান্ত প্রথম সর্বজনীন বিচারব্যবস্থার মামলা।
 
বার্তায় ব্রুকের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী তুন খিন জানান, গণহত্যা সংঘটনকারীরা কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না। ঘৃণ্য এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জন্য সারা বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। তার দাবি, আর্জেন্টিনার আপিল বিভাগের দ্বিতীয় চেম্বার আদালত নিশ্চিত যে মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের মাত্রা ভয়াবহ এবং সেগুলো অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে। ব্রুক ও ৭ রোহিঙ্গার পক্ষে মামলাটির আইনি লড়াইয়ে আছেন বিশ^খ্যাত আইনজীবী টমাস ওজেয়া কুইন্টানা।