
কৈবর্ত বিদ্রোহ বা বরেন্দ্র বিদ্রোহ হলো কৈবর্ত সামন্ত রাজা দিব্যের নেতৃত্বে শুরু হওয়া তাদের তৎকালীন পাল রাজা দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭০-১০৭৫) পাল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি বিপ্লব। দশম-একাদশ শতকে বরেন্দ্র মাৎস্যন্যায় প্রকট হয়ে উঠলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই চরম অরাজকতা থেকে মুক্তি পাবার জন্য তৎকালীন সমস্ত কৈবর্ত শক্তি সম্মিলিত হয়েছিল।
বিদ্রোহটি বাংলার উত্তরাংশে সংঘটিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহের মাধ্যমে কৈবর্তরা সামন্ত রাজা দিব্যের নেতৃত্বে বরেন্দ্র ভূমিতে পুনরায় নিজেদের সার্বভৌম রাজ্য গড়তে সক্ষম হয়েছিল। কৈবর্তরা প্রাচীন বাংলায় খুব শক্তিশালী ছিল এবং অনেক জায়গায় রাজত্ব করত। বিশেষত বাংলার গাঙ্গেয় উপত্যকায় তারা ছিল প্রধান জনগোষ্ঠী।
পাল আমলেও কৈবর্তরা ছিল সমাজের নিয়ামক শক্তি, এদের অনেকেই মন্ত্রী ও সেনানায়কের ভূমিকায় ছিল। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, বাংলার তৎকালীন ব্রাহ্মণেতর সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে জনসংখ্যা ও বাহুবলে কৈবর্তরাই প্রধান ছিল। পাল রাজারা বৌদ্ধ ছিল কিন্তু শেষের দিকের রাজারা পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মকে প্রাধান্য দিতে থাকে।
এর ফলে কৈবর্তরা যারা তন্ত্র ও বৌদ্ধধর্মের সাথে যুক্ত ছিল তাদের সামাজিক মর্যাদা কমতে থাকে। কৈবর্তরা মূলত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল- কৃষিজীবী ও জেলে। রমেশচন্দ্র মজুমদার ও রোমিলা থাপর মতে, এটি মূলত কৃষক বিদ্রোহ; কিছু কৈবর্ত সামন্ত রাজা কৃষকদের বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত করেন। সিংহাসন আরোহণের সময় পাল রাজা দ্বিতীয় মহীপাল তার দুই ভাই দ্বিতীয় শুরপাল ও রামপালকে বন্দি করেন।
ফলে বন্দি দুই ভাইয়ের কিছু স্থানীয় সামন্তও তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। পাল শাসনকে সাধারণত “স্বর্ণযুগ” বলে অভিহিত করা হয়।
তথ্য: ইন্টারনেট।
মানবকণ্ঠ/আরএইচটি
Comments