Image description

গত বছরটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর কোনো দেশের জন্যই ভালো ছিল না। পৃথিবীর পরিস্থিতি ছিল টালমাটাল। বাংলাদেশ এটা থেকে দূরে থাকতে পারেনি। বিশ্বায়নের যুগে এককভাবে থাকা সম্ভব নয়। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, আমাদের এখানেও বেড়েছে। আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি আছে। এটাও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আছে। তেল, চাল, ডালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে।
 
ইতিমধ্যে ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মানের অবমূল্যায়ন হয়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্ববাজারে ডলারের মূল্যের বড় উল্লম্ফন। আমাদের অর্থনীতির এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট এবং ডলার সংকট। ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভের পতন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০২৩ সাল জুড়েও ডলার সংকট থাকতে পারে। এটা সহজে দূর হবে না। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘বিলাসী পণ্য’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় শতভাগ এলসি মার্জিনের আওতাভুক্ত করা হয় গাড়ি আমদানি। কিন্তু তাতে গাড়ি আমদানি ঠেকানো যাচ্ছে না। মোট গাড়ি আমদানিতে পাঁচ বছরের মধ্যে রেকর্ডও হয়েছে গত অর্থবছরে।
 
এমন পরিস্থিতি সময়ের আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের ১২৬৫টি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে। গাড়ির বিশাল এ চালান আমদানির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ১৫ ব্যবসায়ী সম্পৃক্ত। তবে কারা গাড়িগুলো আমদানি করতে এলসি খোলেন তা জানা যায়নি।
 
চট্টগ্রাম কাস্টমসসহ সবদিক থেকে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ডলার সংকট সৃষ্টির আগেই খোলা এলসিতে এসব গাড়ি কেনা হয়েছে। আগামী ১৯ ও ২১ মে বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে মোংলা বন্দরে আরও দুটি বিদেশি জাহাজ আসবে বলে জানা গেছে প্রতিবেদনটিতে। বন্দর ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে দেশের বাজারে গাড়ির মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। আর আসন্ন বাজেটে আমদানি করা গাড়িতে শুল্কহার বাড়তে পারে-এমন তথ্য পেয়েই বেশি লাভের আশায় এসব গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। ডলারের মূল্য যেহেতু বেশি, তাই গাড়ির আমদানি মূল্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি পড়ছে।
 
দেশে ডলার সংকট এখনও প্রকট আকারে রয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার খাদ্যপণ্য এবং ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে। কোনো কারণে এসব পণ্য আমদানি কমে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যাব। গাড়ি আমদানিকারকরা কীভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে কোটি কোটি ডলার খরচ করে এখন বিলাসী পণ্য আমদানি করছে সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
 
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালটা  বিশ্বের জন্য আরও কঠিন হবে।  বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মন্দাও দেখা দিতে পারে। এর মধ্যেও আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আমদানি ব্যয় কমানোর কাজটি কঠিন হলেও বিলাসী পণ্যের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। সংকটের এ সময়ে আমদানিনির্ভর বিলাসী পণ্য নিরুৎসাহিত করা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আমরা প্রত্যাশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিলাসী পণ্য আমদানির বিষয়ে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।