
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর বাসায় ঢুকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক হওয়া তিন ব্যক্তি থানায় পেয়েছেন বিশেষ ‘জামাই আদর’। তারা নিজেদের 'সমন্বয়ক' পরিচয় দিয়েছিলেন। আটক হওয়ার পর তাদের প্রথমে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের হাজতখানায় না ঢুকিয়ে বরং এক পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে বসতে দেওয়া হয়। ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে তারা দুজন বসে সিগারেট টানছেন এবং মোবাইলে কথা বলছেন। পুলিশ তাদের আপ্যায়ন করে ডিম, পরোটা, ডাল ভাজি ও চা দিয়ে। এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
গত বুধবার রাতে এএইচএম নোমান রেজা, তানজিল হোসেন, ফারিয়া আক্তার তমা-সহ কয়েকজন মিলে ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের বাসায় গিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তারা ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা থাকার মিথ্যা দাবি করেন। ব্যবসায়ী দেলোয়ার তাদের সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সে যাত্রা রেহাই পান। কিন্তু বাকি টাকার জন্য হুমকি দিলে পরদিন উত্তরা-পশ্চিম থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে নোমান রেজা ছাত্র আন্দোলনের বিমানবন্দর থানা শাখার সদস্য সচিব, তানজিল যুগ্ম সদস্য সচিব, আর ফারিয়া আক্তার তমা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
জানা গেছে, তমা ফারিয়া নামের পরিচিত ফারিয়া আক্তার তমা কোনো ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি নিজেকে ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে জাহির করে নানা অপকর্ম শুরু করেন। তার বাবা স্বপন তালুকদার উত্তরার পশ্চিম থানা ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সরকার পতনের পর তার বাবা আত্মগোপনে চলে গেলেও মেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে থাকে। গত আগস্টে তিনি বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের বাসার সামনে অশ্লীল স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে আলোচনায় আসেন।
আসামিদের থানায় ‘জামাই আদর’ পাওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে দেখা যায়, নোমান রেজা, তমা ফারিয়া ও তানজিল বিমানবন্দর থানার একটি কক্ষে বসে আছেন। নোমান ও তানজিলকে সিগারেট টানতে দেখা যায় এবং তারা মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। হাসিমুখে নোমানকে বলতে শোনা যায়, “আমাগরে হাজতে রাখে নাই। ভালো ব্রেকফাস্ট-ট্রেকফাস্ট আইন্যা খাওয়ালো।” এ সময় তমা ফারিয়াও বলতে থাকেন, “সকালে নাশতা করছি পরোটা, ডিম ডাল আর ভাজি, আর এখন চা।”
এই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর থানা হেফাজতে আসামিদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ধূমপান করা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ওসি তাসলিমা আক্তারকে ফোন করা হলে জানা যায়, তিনি সরকারি সফরে বিদেশে আছেন। তবে দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ভিডিওটি দেখেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির টাকা উদ্ধারের জন্য কৌশলের অংশ হিসেবেই তাদের এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
আদালতে হাজির করার পর বিচারক ওই তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে সাধারণত আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হলেও এই তিনজনকে সেদিন কাঠগড়ায় নেওয়া হয়নি। তাদের কোর্ট হাজতে রেখেই শুনানি হয়।
তমা ফারিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার বাবা যুবলীগের নেতা হলেও মেয়েটি বিপথে চলে গেছে। এ কারণে তার বাবা অনেক আগেই তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যরাও তাকে এড়িয়ে চলেন।
Comments