Image description

নারীদের মাসিক চলাকালে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ফ্রেশ অনন্যা এবং পিএজিএসবি’র প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে এ প্যানেল আলোচনাটি আয়োজন করে দৈনিক আমাদের সময়।

মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি এবং দীর্ঘদিনের সামাজিক ট্যাবু ভাঙার উদ্দেশ্যে ‘টুগেদার ফর এ মেনস্ট্রুয়েশন-ফ্রেন্ডলি ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক এই সেমিনারটির আয়োজন করা হয়েছিল। সেমিনারটির পৃষ্ঠপোষক ছিল দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)-এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন’ এবং পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট গাইনিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিএজিএসবি)।

পিএজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক কোহিনূর বেগম এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের একটি বিরাট অংশের এখনো মাসিক সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে- যা প্রায়শই লজ্জার বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘মাসিক জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ এবং এটি কখনই লজ্জার কারণ হওয়া উচিত নয়। আজকের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা একসঙ্গে চেষ্টা করব এই সামাজিক ট্যাবুগুলো ভাঙতে, যেগুলো বহুদিন ধরে নারীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসক, পৃষ্ঠপোষক, গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্বাস করি-এই আলোচনা সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি ভবিষ্যতের প্রজন্মকে আরও সচেতন, সহানুভূতিশীল এবং স্বাস্থ্যবোধ সম্পন্ন করে তুলবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমজিআই পরিচালক ব্যারিস্টার তাসনিম মোস্তফা বলেন, ‘যে সমাজে পুরুষ ও নারী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গেই যুক্ত, সেখানে লজ্জা এখনো মাসিক সম্পর্কে আলোচনাকে ম্লান করে রাখবে, এটা কল্পনাতীত। এই নীরবতা ভাঙা, খোলামেলা মনোভাব পোষণ করা এবং নারীর স্বাস্থ্যের এই স্বাভাবিক দিকটি সকলের বোঝা এবং সম্মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সেমিনারে পিরিয়ড বিষয়ক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন পিএজিএসবির মহাসচিব অধ্যাপক গুলশান আরা। তিনি বলেন, মাসিক হলো একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা বোঝাপড়া এবং যত্ন সহকারে মোকাবিলা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন এবং সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আমরা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন,‘মাসিক চলাকালীন যোনিপথের পিএইচ লেভেল পরিবর্তিত হয় এবং এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।’

ডা. তানিয়া রহমান মিতুলের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় প্রায় ৫০ জন ডাক্তার অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এমজিআই সিনিয়র জিএম (ব্র্যান্ড) কাজী মো. মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের কিশোর ও স্কুল স্বাস্থ্য প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. শামসুল হক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কিশোর ও প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মঞ্জুর হোসেন, মনোবিজ্ঞানী আফসানা রহমান লিওনি, দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাঈনুল আলম, হেড অব অনলাইন মঈন বকুল ও হেড অব ডিজিটাল মার্কেটিং সরোয়ার কবির শাকিল।

আলোচনায় বক্তারা পিরিয়ড-সংক্রান্ত বিভিন্ন জানা-অজানা, সামাজিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠতে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮-এর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে মাত্র ২৯ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। অর্থাৎ প্রায় ৭১ শতাংশ নারী এখনো স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করার ফলে সার্ভিক্যাল ইনফেকশন হতে পারে। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহারের ফলে পরবর্তী সময়ে বন্ধ্যত্ব, এমনকি ক্যানসার-এরও ঝুঁকি থাকে। এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। এই সামাজিক ট্যাবুগুলো ভেঙে একটি সুস্থ ভবিষ্যত গঠনের লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন। সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই এই শক্তিশালী ও অর্থবহ প্যানেল আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়।