Image description

হৃদরোগ একটি নীরব ঘাতক, যা বিশ্বের অনেক মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ। তবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ বুঝতে পারলে আগেভাগেই প্রতিরোধ সম্ভব। চিকিৎসকদের মতে, কিছু লক্ষণ হৃদরোগের পূর্বাভাস দেয়, যেগুলিকে অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে। 

ইটিংওয়েলের এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা হৃদরোগের ৮টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ উল্লেখ করেছেন। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। যেই লক্ষণ দেখলে সাবধান হতে হবে:-

১. বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি: বুকে চেপে ধরা, ভারী লাগা, জ্বালাপোড়া কিংবা চাপ অনুভব করলে তা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। অনেক সময় এই ব্যথা হাত, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। সব বুকব্যথাই হৃদরোগের লক্ষণ নয়, তবে এটি হৃদযন্ত্রে সমস্যা হওয়ার একটি অন্যতম সাধারণ উপসর্গ।

২. সহজ কাজেও শ্বাসকষ্ট: দ্রুত হাঁটা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা বা এমনকি শুয়ে থাকলেও যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে তা আপনার হৃদযন্ত্রে সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এই শ্বাসকষ্ট অনেক সময় হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত প্রবাহের অসুবিধার কারণে ঘটে, যা হার্ট ফেইলিওর বা ভালভের অসুস্থতা নির্দেশ করতে পারে।

৩. অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন বা বুক ধড়ফড় করা: যদি হঠাৎ বুক ধড়ফড় করে বা হৃৎস্পন্দন খুব দ্রুত হয়, বিশেষ করে শরীরচর্চার সময়, তবে তা অ্যারিদমিয়া বা হার্ট রিদমের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। দীর্ঘসময় ধরে এই উপসর্গ থাকলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৪. পা বা গোড়ালিতে ফোলাভাব: যখন হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন রক্ত জমে গিয়ে নীচের অংশে ফোলাভাব সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় ইডিমা। দুই পায়ে একসঙ্গে ফোলাভাব এবং সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা ক্লান্তি থাকলে, এটি হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা হতে পারে।

৫. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ নীরবে হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালিতে ক্ষতি করে। দীর্ঘ সময় ধরে এই অবস্থা থাকলে হার্ট ফেইলিওর বা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি রক্তচাপ মাপানো উচিত। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৬. হঠাৎ মাথা ঘোরা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি: হৃদপিণ্ড যদি মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়, তবে মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা বা হঠাৎ ক্লান্ত লাগা অনুভূত হতে পারে। এগুলোকে অবহেলা না করে, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।

৭. অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, কিডনি সমস্যা, ঘুমে সমস্যা (স্লিপ অ্যাপনিয়া),  বা অতিরিক্ত ওজন সবগুলোই হৃদরোগের ঝুঁকি বহন করে। যদি একাধিক সমস্যা একসঙ্গে থাকে, তবে একটি পূর্ণাঙ্গ হৃদপরীক্ষা করা উচিত।

৮. পারিবারিক ইতিহাসে হৃদরোগ: পরিবারে যদি কারও হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনিও ঝুঁকিতে রয়েছেন। যদিও এখন সুস্থ বোধ করছেন, তবুও একজন প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

উল্লিখিত যেকোনো একটি লক্ষণ থাকলেও অবহেলা না করে কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। অনেক সময় ছোট উপসর্গও বড় রোগের পূর্বাভাস দেয়। আপনি যদি বয়স, জীবনধারা বা পারিবারিক কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব বলছেন চিকিৎসকরা। 

অনেকসময় হৃদরোগ নিঃশব্দে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে। তাই বয়স, উপসর্গ বা পারিবারিক ইতিহাস যাই হোক না কেন, সময়মতো একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।