Image description

নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ও আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে খ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে ২২ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (২৮ এপ্রিল)  উপাচার্যের নির্দেশে বন্দর থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

সাধারণ ডায়েরিতে, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান, মিজানুর রহমান, এনামুল হক, তরিকুল ইসলাম, সাংবাদিকতা বিভাগের নাজমুল ঢালী, লোক প্রশাসন বিভাগের মোকাম্মেল শেখ, আইন বিভাগের তরিক হোসেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এমডি শিহাব, কোস্টাল স্ট্যাডিজ বিভাগের অপূর্ব রকি, রসায়ন বিভাগের রফিক এবং অজ্ঞাত ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে বেড়ায়। তারা প্রশাসনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাধার সৃষ্টি করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে তারা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রবেশ করে সব কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে বের করে দেয় এবং রেজিস্ট্রারের কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেয়। এমনকি তারা রেজিস্ট্রারের ভবনের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে প্রশাসনিক কাজে বিঘ্ন ঘটে। বেলা আড়াইটার দিকে কর্মকর্তারা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা ভয়-ভীতি দেখায়।

এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নামে উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভাঙার অভিযোগ এনে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ববি উপাচার্য শুচিতা শরমিন। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদী আমলেও এমন যৌক্তিক আন্দোলনে হামলা মামলা দিয়ে আন্দোলন দমন করা হতো। এখনো আমরা দেখছি আমাদের উপাচার্য আন্দোলন দমন করতে ফ্যাসিবাদের ন্যায় মামলা দিয়ে যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে চাচ্ছে। এসব করে উপাচার্য ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের পথ সুগম করতে চায়। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে করতে দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, এসব মিথ্যা মামলা জিডি করে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন থামানো যাবে না।”

এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ  বলেন, "ভিসি একদিকে বেআইনি ক্ষমতাবলে স্বৈরাচারের দোসরদের রক্ষা করছেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন দমনে একের পর এক মামলা দিয়ে সকল যৌক্তিক আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রশাসনের এ ধরনের ফ্যাসিস্ট আচরণ নিন্দনীয়।"

এ বিষয়ে সিকিউরিটি অফিসার সানোয়ার পারভেজ লিটন বলেন " বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী, রেজিস্ট্রারের রুমে তালাবদ্ধ করে এ কারণে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে আমার পক্ষ থেকে জিডি করা হয়েছে। আসলে আমার পক্ষ থেকে বলতে উপর থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হয় সেটাই আসলে আমার করতে হয়। অতীতের মামলাগুলোও তাদের নির্দেশক্রমেই করতে হয়েছে। "

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সনিকে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া মেলেনি।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক মুহাম্মদ মুহসিনকে সসম্মানে তার দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অব্যবহিত দিতে হবে, আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং দোসরদের নানা সুযোগ দেওয়ায় উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।