Image description

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ১১০টি প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে লিখিতভাবে এসব প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসে এসব প্রস্তাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা। এতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা, সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসান ও দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ আলী উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে মহান শহীদদের আত্মদান ও মূল্যবোধকে ধারণ করে নিরাপদ, আধুনিক ও নৈরাজ্যমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে উপযুক্ত সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে ক্যাম্পাস সংস্কার এবং ক্যাম্পাসের বাস্তবিক সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে একটা গবেষণা দল করা হয়েছিল। তাদের দেওয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করে উপাচার্যকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আমরা চাই, ক্যাম্পাস নতুনভাবে সংস্কার করা হোক, ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে উঠুক।’

ছাত্রশিবিরের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা; ২০১২ সালে গুমের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসের সন্ধান পেতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা; স্বৈরশাসনামলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও তাঁদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া; আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসংশ্লিষ্ট সব দুর্নীতির তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করা; ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব স্থাপনা ও ফলক ফ্যাসিবাদের আইকনদের নামে নামকরণ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে পরিবর্তন করা; ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিতকল্পে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; হল পরিচালনা ও আসন বণ্টনসহ যাবতীয় কার্যক্রম রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা; আইন করে গণরুম-গেস্টরুম কালচার চিরতরে বিলুপ্ত করা; হলের প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটরদের ক্যাম্পাসে অবস্থান ও নিয়মিত অফিসে যোগদান নিশ্চিত করা।

ছাত্রশিবির আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান নিশ্চিত করা; মাদকবিরোধী সেল গঠন করে অভিযান চালিয়ে ক্যাম্পাসকে সব ধরনের মাদকমুক্ত করা; র‌্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সপ্তাহের সাত দিনই সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা; ক্যাম্পাসে সব ধর্মের অনুসারীদের উপাসনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; অতিদ্রুত আইন প্রণয়ন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনের দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে গ্রহণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ সব নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

এ ব্যাপারে সন্ধ্যায় উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সবগুলোতে শিক্ষা, পরিবহনব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষকদের নিয়ে প্রতিটা বিষয় স্তরে স্তরে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি