Image description

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তৎপর হিজবুত তাহরির ও জামায়াতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন শিবিরের মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো। এমন পরিস্থিতি নিজেদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বুয়েটের শহীদ মিনারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সুনামগঞ্জে আটককৃত ২৪ বুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয় সে বিষয়ে সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করে আদালতের কাছে আর্জি জানান শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, যেখানে উল্লেখ ছিল যে, যদি কোনো শিক্ষার্থী আসলেই দোষী হয় তবে আমরা তার শাস্তি চাই, নির্দোষ হলে নিঃশর্ত মুক্তি চাই। কিন্তু এই মানববন্ধনের পরেই বিষয়টি বদলাতে শুরু করে। মানববন্ধনে দাঁড়ানো সকল শিক্ষার্থীদের ডেকে ডেকে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়। নানাভাবে হল বা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এবং যার যার নিজ নিজ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের দিয়ে। বিভিন্নভাবে হলে সিট বাতিল অথবা টার্ম বহিষ্কারের ভীতি প্রদর্শন করে হলে অরিত্র ঘোষ এবং মিশু দত্তকে আনুমানিক ভোর ৪ টা পর্যন্ত আহসান উল্লা রুমে এবং মাঠে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়। সবাইকে ডেকে এনে সবার সামনে আমাদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে কিছু মানুষ দ্বারা অসংলগ্ন আচরণ আমাদের অপমানের সামিল।

রাতে একসাথে কাচ্চি খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে মিথ্যাচার হয়েছে এবং সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসেছিলো এমন বানোয়াট মিথ্যা বুয়েটের চলমান ছাত্রদের ফেসবুক গ্রুপে বেনামে দিয়ে আমাদেরকে অপরাধী জানিয়ে আমাদের উপর যে মব জাস্টিস শুরু করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে জড়িত ও দোষীদের কোন শাস্তির আওতায় না আনার কারণে দিনের পর দিন তারা আমাদের নিপীড়ন ও সামাজিকভাবে হেনস্তা করে যাচ্ছে।

এই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল কার্যক্রম থেকে একে একে তাদের বাদ দিয়ে দেয়া এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও হুমকি প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রমেও বিভিন্ন বাধা প্রদান করা হয় এই শিক্ষার্থীদের।

এই শিক্ষার্থীরা শঙ্কা প্রকাশ করে জানান, হিযবুত তাহরীর ও শিবিরের কার্যক্রম নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করার পরও এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যারা বুয়েট ক্যাম্পাসে হিযবুতের পোস্টার ও লিফলেট ছড়িয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাকি বাহিরের এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো জঙ্গি ও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের গোপন গ্রুপে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম, পরিচয়, ব্যাচ উল্লেখ করে প্রচার করছে। ফলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই সকল ব্যক্তিদের রাষ্ট্রায়ত্ব বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, যে বুয়েটে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের সূচনা হয় সেই বুয়েটে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে মতামত রেখে দিবস পালন ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ইফতার দেওয়ার মতো ঘটনাকে কালিমা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস রাখা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরকে অতি দ্রুত তদন্তের জন্য ডাকা হোক এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক।

উল্লেখ্য, টাঙ্গুয়ার হাওরে জামায়াত ইসলামের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সঙ্গে একত্রে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়ার অপরাধে আটক বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ক তদন্তের বিষয়েও গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দিতে পারেনি বুয়েট কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বুয়েটকে কেন্দ্র করে শিবির ও হিযবুতের কার্যক্রমের বিষয়ে প্রাথমিক গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টির নিন্দা জানায় বুয়েটের শিক্ষক সমিতি। কিন্তু বুয়েটের একটি সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে হিযবুতের লিফলেট বিতরণের ভিডিও প্রকাশ ও বুয়েটের বিভিন্ন স্থানসহ পলাশী মোড়ে হিযবুতের পোস্টার কে বা কারা টাঙ্গিয়েছে, এ বিষয়ে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করেও কোন তথ্য প্রদানের কথা জানা যায়নি বুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এ বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়েছে কিনা সেটিও নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টির কোন কর্তৃপক্ষ।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস