Image description

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকার একজন শিক্ষার্থী। কিন্তু দ‚রবর্তী জেলার একটি সরকারি মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় মেয়েকে নিজ এলাকার কোনো প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা। সেজন্য নিকটবর্তী একটি মেডিকেলে যোগাযোগও করেন তিনি। সেখান থেকে জানতে পারেন, নতুন অটোমেশন পদ্ধতি চালুর কারণে ইচ্ছে করলেই তিনি তার সন্তানকে এই মেডিকেলে ভর্তি করতে পারবেন না। ততদিনে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগও হাতছাড়া হয়ে গেছে ওই শিক্ষার্থীর। আর এখানেই শেষ হয়ে যায় তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। শিক্ষার্থীর অভিভাবক আক্ষেপ করে বলেন, বিষয়টি তিনি আগে জানতেন না। জানলে দূরের সরকারি মেডেকেলেই মেয়েকে ভর্তি করে দিতেন। পূরণ করতে পারতেন দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। 

বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চাপিয়ে দেয়া এই অটোমেশন পদ্ধতির বলি হয়েছে ওই শিক্ষার্থীর মতো আরও অনেকে। নতুন নীতির কারণে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশ ও সংক্ষুব্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সংকটে পড়েছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। অনেক কলেজে এখনও অনেক সিট খালি পড়ে আছে। এমন কী বিনা খরচের সিটও প‚রণ হয়নি কোথাও কোথাও। অথচ এবারের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক লাখ ২ হাজার ৩৬৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হওয়া ৪৯ হাজার ৯২৩ জনই ভর্তিচ্ছু। এদের মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেলে ৫ হাজার ৩৮০ সিট প‚র্ণ হলেও ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৬ হাজার ২৯৫টি আসন পূরণ হচ্ছে না। ভর্তির সময় বাড়িয়েও ৩০/৪০ ভাগ আসনে শিক্ষার্থী আনতে পাচ্ছে না কলেজগুলো। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৈরি ভর্তি-ইচ্ছুক তালিকায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা ঢাকার বাইরে গ্রামে-গঞ্জের কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। যেখানে মানিয়ে নেয়া তাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। আবার মফস্বলের অনেকে রাজধানীতে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু এখানকার ব্যয় বহন তাদের পক্ষে কঠিন।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসনের চারগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অটোমেশন পদ্ধতির কারণে নিজেদের পছন্দের মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এ মূখি হচ্ছেন না। আবার অনেক শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তালিকানুযায়ী ভর্তি হলেও পরে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে অন্য মেডিকেলে চলে গেছেন। এতে ওই আসন আবার শূন্য হয়ে গেছে। প্রথমত আসন সংখ্যার বিপরীতে শিক্ষার্থী কম দেয়া, পরে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে আরও আসন খালি হওয়ায় বেশির ভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজেরই আসন প‚রণ হয়নি। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রমেও। 
অবশ্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা।

তারা বলছেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর বিষয়টি অনেকের কাছে নতুন। এ জন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সমস্যাগুলো থাকবে না। 

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. টিটু মিয়া বলেন, অনেকেই আগে অভিযোগ করেছেন- বেসরকারি মেডিকেলগুলো বেশি টাকা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। কিন্তু এবার আর সেই সুযোগ থাকবে না। যার সিরিয়াল আছে- সে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিয়েই ভর্তি হবে। অটোমেশন পদ্ধতিতে আমরা মেধাকে ম‚ল্যায়ন করছি। তিনি বলেন, দেশের যে ডিগ্রি আছে তা আগামী বছর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো বাছাই করে পছন্দের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতো। গত বছর এই সুযোগ রহিত করে নতুন অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রথমে শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য পাঁচটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পছন্দক্রম রাখা হয়। পরে এই নিয়ম বদলে ফেলে ছাত্রদের জন্য ৬০টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তালিকা করা হয়। নতুন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী আবেদনের পর একটি নির্দিষ্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে তাকে জানানো হয়। ওই কলেজে ভর্তি হতে চাইলে ১০০ টাকা দিয়ে ভর্তির নিশ্চয়ন করতে বলা হয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী পছন্দের প্রতিষ্ঠান পাননি। আর পছন্দের ব্যাপারটি আর্থিক সংগতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধায় আগে সে অনুযায়ী কলেজ নির্ধারণ করার সুযোগ ছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের যে কলেজে সুযোগ দেয়া হয়েছে বা পছন্দের তালিকায় যে মেডিকেল কলেজের নাম আছে, সেখানকার শিক্ষা ব্যয় শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সামর্থ্যে নেই এমন অনেকে ভর্তি হতে পারেন নি। এছাড়া ভর্তিতে বিশৃঙ্খলার কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিএমডিসি’র অনুমোদন নিয়ে বিদেশে পড়তে গেছেন। 
চিকিৎসা শিক্ষার এমন অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন বিএমডিসি’র অদ‚রদর্শী নীতিমালাকে। 

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সদস্য ও সাবেক সভাপতি ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিএমডিসির অদ‚রদর্শি ও হুট করে চাপিয়ে দেয়া নতুন অটোমেশন পদ্ধতির ফলে অনেক আসন এখনও প‚র্ণ হয়নি। নতুন এই ভর্তি পদ্ধতি যে চরম ভ্রান্ত তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান। তিনি বলেন, অটোমেশন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। এটি সমাধানে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছি।

মানবকণ্ঠ/এআই