Image description

বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্ন তাত্ত্বিক সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধীনে পরিচালিত এই প্রত্ন তাত্ত্বিক জাদুঘরটি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক। 
বঙ্গভূমে প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের সবচেয়ে বড় সম্ভার এই জাদুঘর। প্রায় ১৭ হাজার প্রত্ন তাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরটির সংগ্রহে। সময়ের ব্যবধানে এর সংগ্রহ বাড়লেও বাড়েনি আকার-আয়তন। ফলে মাত্র এক হাজার ২০০টি নিদর্শন স্থান পেয়েছে এর গ্যালারিতে। আর বাকি ১৬ হাজার নিদর্শনেরই স্থান হয়েছে গুদাম ঘরে। লোকচক্ষুর অন্তরালে তালাবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী বিপুলসংখ্যক প্রত্ন তাত্ত্বিক নিদর্শন। এর ফলে যেমন তথ্য পাচ্ছেন না ইতিহাসের গবেষকরা, তেমনি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই বিশাল সম্ভার অজানাই থেকে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের কাছে।
১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জাদুঘরটিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জাদুঘরের গ্যালারিতে প্রত্ন  সম্পদ সংরক্ষণের জন্য তিল ধারণেরও ঠাঁই নেই। বাইরের গ্রন্থাগার ভবনের নিচে পড়ে রয়েছে অনেক নিদর্শন। জাদুঘরের মাঝখানের খোলা জায়গার গ্যালারিতে পড়ে রয়েছে শতাধিক প্রস্তর মূর্তিসহ নানা প্রত্ন সম্পদ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নবম শতকের দুর্গা সিংহবাহিনী, সূর্য, দশম শতকের বিষ্ণু (ত্রিবিক্রম), উপবিষ্ট গণেশ, এগারো শতকের চৌকাঠের অংশবিশেষ, বারো শতকের উমা-মহেশ্বরসহ অসংখ্য মূর্তি। জাদুঘরের আঙিনার ওপরে ছাদ না থাকায় খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে পুরাকীর্তির বিশাল সম্ভার।
একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যায়, গ্যালারির ঠিক সামনে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে আরও কিছু প্রত্ন সম্পদ। মূল কমপ্লেক্সের ভেতরে পাহারা থাকলেও খোলা জায়গা পুরোটাই রয়েছে অরক্ষিত। জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দর্শনার্থীরা ছবি তুলছেন ঠিকই। 
জাদুঘরের উপ-সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস বলেন, জাদুঘরের ভেতরে প্রত্ন  সম্পদ রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এখানে ১৭ হাজার প্রত্ন  নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য মাত্র ১১টি গ্যালারি কক্ষ রয়েছে, যা পর্যাপ্ত নয়। ফলে বাধ্য হয়ে প্রত্ন  নিদর্শনগুলো বারান্দায় এবং গুদাম ঘরে রাখা হয়েছে। আরও গ্যালারি প্রয়োজন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত জাদুঘরের পূর্ণাঙ্গ ইনভেন্টরি প্রতিবেদন মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮৫টি প্রত্ন  সামগ্রীসহ প্রায় তিন হাজার দুর্লভ বস্তু হারিয়েছে জাদুঘর থেকে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ৯৭১টি নিবন্ধিত মুদ্রার মধ্যে ৩৩টি এবং ১৩ হাজার ৯৩৩টি গ্রন্থের মধ্যে ৮৫টি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ১৩ হাজার ৫৭৬টি প্রকাশনার (পুস্তক, পুস্তিকা, গ্রন্থ, জার্নাল ইত্যাদি) মধ্যে তিন হাজার ৫২টি।
তরুণ প্রজন্ম ও ইতিহাসের গবেষকদের কাছে জাদুঘরটির গুরুত্ব উল্লেখ করে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর শুধু আমাদের এই জনপদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি ভারতবর্ষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমি একজন ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে খুব আশাহত হয়েছি এটা জেনে যে, ঐতিহাসিক এ জাদুঘরটিতে এখনও এত বড় অঙ্কের প্রত্ন তাত্ত্বিক নিদর্শন গুদাম ঘরে তালাবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। এটি সত্যিই দুঃখজনক।’এসব বিষয়ে কথা হয় বরেন্দ্র জাদুঘরের নবনিযুক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বর্তমানে এক শতাব্দী পার করেছে। জায়গা সংকটের কারণে ১৭ হাজার নিদর্শনের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২০০ প্রদর্শনীতে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো স্টোররুম রাখা আছে। আমরা জাদুঘরটি আরও বর্ধিত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।’