
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নীতিগত সুদের হার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই ২০২৫) বিকেল ৩টায় ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
মূল্যস্ফীতির চাপ ও নীতি অবস্থান
মুদ্রানীতিতে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রার (৬ দশমিক ৫ শতাংশ) উপরে রয়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুদের হার কমানোর ঝুঁকি না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কড়াকড়ি নীতি বজায় রেখেছে। গভর্নর জানান, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামলে এবং প্রকৃত সুদের হার ৩ শতাংশে পৌঁছালে ধাপে ধাপে নীতি হার কমানোর বিষয় বিবেচনা করা হবে।
নীতি হারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের হার (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমানত গ্রহণের হার (স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি) ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
ব্যাংক খাতের সংস্কার ও চ্যালেঞ্জ
খেলাপি ঋণ ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার কারণে ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে চাপে রয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক ব্যবস্থা, সম্পদের গুণগত মান পর্যালোচনা এবং ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা চালু।
বৈদেশিক মুদ্রা ও রপ্তানি
যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান বাজারে শুল্কবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারে নমনীয়তা এনেছে। দিনে দুইবার রেফারেন্স বিনিময় হার ঘোষণা করা হচ্ছে, যা মুদ্রাবাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। তবে অতিরিক্ত অস্থিরতা রোধে প্রয়োজনে বাজারে হস্তক্ষেপ করা হবে বলেও জানানো হয়।
অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জ
সরকারের বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই লক্ষ্য অর্জনে তাদের নীতি সহনশীল হলেও কঠোর থাকবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং ব্যাংক খাতে আস্থার সংকটকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
Comments