
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র দরবার শরিফে ‘তৌহিদী জনতা’ নামধারী একদল লোকের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা নুরুল হকের কবর থেকে মরদেহ তুলে পদ্মার মোড়ে পুড়িয়ে দেয়।
পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানান, নিহত ব্যক্তি গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের যতু মিস্ত্রিপাড়ার রাসেল মোল্লা (২৮)। তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। জেলা সিভিল সার্জন এস এম মাসুদ বলেন, “২২ জন আহতকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। তাকে গোয়ালন্দ দরবার শরিফে মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে কাবা শরিফের আদলে রঙিন বেদিতে দাফন করা হয়। এ নিয়ে তৌহিদী জনতার মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। তারা কবর সমতল করা, রঙ পরিবর্তন ও দরবারের সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি জানায়। গত মঙ্গলবার ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হকের দরবারে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে শুক্রবার বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, জুমার নামাজের পর শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এরপর শাবল, হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা নুরুল হকের বাড়ি ও দরবারে হামলা চালায়। পুলিশের দুটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দরবারের ভক্তরা ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। হামলাকারীরা দেয়াল টপকে দরবারে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা কবর থেকে মরদেহ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে পুড়িয়ে দেয়।
হামলাকারী মো. আল আমিন বলেন, “নুরাল পাগল নিজেকে ইমাম মাহাদি ও খোদা দাবি করেছিলেন। তার কার্যকলাপ শরিয়তবিরোধী ছিল। তাই জনতা তার দরবার ভেঙে আগুন দিয়েছে এবং মরদেহ পুড়িয়েছে।”
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কৌশিক কুমার দাস জানান, আহতদের শরীরে ইটপাটকেল, লাঠি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, “তৌহিদী জনতা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও ইউএনওর গাড়িতে হামলা করে। বিপুল জনতার কারণে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে র্যাব ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।” তিনি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নুরুল হক আশির দশকে নিজেকে ইমাম মাহাদি দাবি করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পরে ফিরে এসে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন। তার মৃত্যুর পর কবরের কাঠামো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও বৃহস্পতিবারের মধ্যে সমাধান না হওয়ায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
নুরুল হকের পরিবার বা ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
Comments